এতদিন কাজ হচ্ছিল বিক্ষিপ্তভাবে। এই প্রথম হুগলি জেলা পরিষদ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের সমন্বয়ে বড়মাপের পাকা রাস্তা তৈরির কাজে হাত দিল।
আরামবাগ ব্লক এলাকায় দীর্ঘদিনের দাবি থাকা তিনটি গ্রামীণ মোরাম রাস্তাকে পিচের করা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) সুমন ঘোষ বলেন, “দুই দফতরের মেলবন্ধনে আরামবাগের তিনটি পাকা রাস্তা তৈরির কাজ খুব শীঘ্র শুরু হবে। এ জন্য মোট খরচের মধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তহবিল থাকবে ৭৫ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের। জেলায় এ ধরনের কাজ এই প্রথম। রাস্তাগুলির জন্য দেড় কোটি টাকার উপর বরাদ্দ হয়েছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অন্যতম প্রধান এই মহকুমা বন্যপ্রবণ হওয়ায় এখানে পরিকাঠামো (রাস্তা) গড়ার ক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বড় ভূমিকা রয়েছে। আরামবাগ ব্লকে যে তিনটি রাস্তা তৈরি হচ্ছে সেগুলি হল গৌরহাটি-১ পঞ্চায়েতের পইসরা মোড় থেকে বেউরগ্রাম হয়ে মহিষগোট। প্রায় আড়াই কিলোমিটার ওই রাস্তার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ১১৭ টাকা। দ্বিতীয়টি মাধবপুর পঞ্চায়েতের জয়সিংচক শেখপাড়া থেকে পাণ্ডুগ্রাম পিরতলা। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার জন্য খরচ হবে ৪২ লক্ষ ৯ হাজার ৪১৪ টাকা। তৃতীয় রাস্তাটি সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের গির্জাতলা থেকে কদমতলা হয়ে বাজারপাড়া। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৬৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৯০ টাকা। তিনটি রাস্তার জন্য বরাদ্দ হওয়া মোট ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৬৬ টাকার মধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তহবিল থাকছে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৭৪ টাকা এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের ৩৮ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৯২ টাকা।
পঞ্চায়েত এলাকার এই সব গ্রামীণ রাস্তার একেকটির উপর নির্ভর করেন অন্তত ৫-৬টি গ্রামের হাজার দশেক মানুষ। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব মোরামের রাস্তাগুলি পাকা করার দাবি ছিল বছর দশেক ধরে। মাঝেমধ্যে মোরাম ফেলা হলেও মাস কয়েকের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠত। বিশেষত, বর্ষায় প্রধান সড়কের সঙ্গে ওই সব গ্রামীণ মোরাম রাস্তাগুলির যোগযোগ প্রায় থাকত না বললেই চলে। ফলে পঞ্চায়েতে গ্রামের মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই থাকত। বিষয়টি নিয়ে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতিতে বৈঠকও হয় কয়েকবার। কিন্তু টাকার সমস্যার কারণে কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আরামবাগ থেকে নির্বাচিত জেলাপরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মানস মজুমদার (তৃণমূল) বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আনলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের সমন্বয়ে ওই তিনটি রাস্তা পাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। গৌরহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “রাস্তার অসুবিধায় গ্রামগুলির সার্বিক উন্নয়নে যে বাধা ছিল তা এ বার কাটবে।”
পাকা রাস্তা হওয়ার খবর পেয়ে খুশি ওই সব গ্রামের বাসিন্দারাও।