বালিচোরদের পোয়াবারো

দফতর পরিবর্তনের গেরোয় রাজস্ব ক্ষতি কোটি টাকার

উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতার হাত বদলে কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩২
Share:

দ্বারকেশ্বর নদ থেকে তোলা হচ্ছে বালি। ছবি: মোহন দাস।

উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতার হাত বদলে কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের।

Advertisement

বৈধ অনুমতি ছাড়াই আরামবাগ মহকুমার নদীগুলো থেকে বালি চুরির রেওয়াজ বরাবরই ছিল। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্তারা মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে তা রোধ করার চেষ্টা করতেন। এর ফলে সরকারের ঘরে রাজস্ব বাবদ আয়ও হত। যাঁরা বৈধভাবে বালি তোলেন, এতদিন তাঁদের সেই অনুমতি দিত সংশ্লিষ্ট জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর। কিন্তু জুলাই মাস থেকে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে এক সরকারি নির্দেশে নদী থেকে বালি তোলা সংক্রান্ত অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে সরিয়ে সেচ দফতরের হাতে দেওয়া হয়েছে। এতদিন অনুমতি দেওয়ার জন্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সেস আদায় করত। নতুন নিয়মে ওই সেস নেওয়ার দায়িত্ব বর্তেছে সেচ দফতরের উপর। কিন্তু এই নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ, আরামবাগ মহকুমা সেচ দফতরের রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কোনও পরিকাঠামোই নেই। এই অবস্থায় একেবারেই নজরদারিহীন হয়ে অবাধে চলছে বালি লুঠ। আর এর ফলে সরকারের কয়েক কোটি টাকার রাজস্বেরও ক্ষতি হচ্ছে।

হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) তথা জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক আবিদ হোসেন বলেন, “বিষয়টি এখন সেচ দফতরের হাতে। কাজেই এটা দেখার দায়িত্ব তাঁদের।” জেলা সেচ দফতরের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ভাস্বরসূর্য মণ্ডলের কথায়, “আমাদের রেভিনিউ সেকশন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

Advertisement

মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর, মুন্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বর নদীর যত্রতত্র গড়ে উঠছে অবৈধ বালি খাদান। বৈধ বালি খাদানের মালিকদের অভিযোগ, নতুন সরকারি আদেশের পর এখনও নজরদারি ব্যবস্থা সে ভাবে গড়ে না ওঠায় নদীগুলি সম্পূর্ণ তদারকিহীন হয়ে গিয়েছে। নিত্য নতুন গড়ে ওঠছে অবৈধ বালি খাদান। এমনকী কিছু বৈধ বালি খাদের মালিকেরাও চালান কাটাতে না পারায় ইচ্ছামত বালি তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, পরিকাঠামো তৈরি না করেই সেচ দফতরকে দায়িত্ব দেওয়ায় সরকারের প্রচুর টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।

নদী থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রে দু’ধরনের পারমিট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এক, কোয়ারি পারমিট। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে ৯০ দিনের জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হত। অন্যটি লং টার্ম লিজ। এ ক্ষেত্রে ৫ বছর নির্দিষ্ট জায়গায় বালি তোলার অনুমতি দেয় কমার্স অ্যান্ড ফাইনান্স ইন্ড্রাস্ট্রি দফতর। আরামবাগ মহকুমায় লং টার্ম লিজ কারও নেই। বালির জন্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর ১০০ সিএফটি বালি প্রতি রয়ালটি ও সেস বাবদ ১১৪ টাকা ধার্য করেছিল। এর ফলে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হত।

মহকুমার বিভিন্ন ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তাদের লক্ষ্য থাকে বালি খাদের অংশীদার হওয়া। দেখা গিয়েছে, বৈধ বালি খাদের মালিকরা যে পরিমাণ বালি তোলার পারমিট পান বা পারমিটের জন্য আবেদন করেন, তার চেয়েও অনেক বেশি বালি তোলেন তাঁরা। পাশাপাশি বেআইনি বালি চোরদের দাপট তো রয়েইছে। দফতর পরিবর্তন হওয়ায় পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার জন্য বর্তমানে বালি চুরি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নদীগুলির যে সব অংশে বালি তোলা নিষিদ্ধ সেই সব এলাকা থেকেও যথেচ্ছ বালি চুরি হচ্ছে। নদীগুলির উপরে যে সেতু রয়েছে সেই সেতুর পিলারের গা থেকেও বালি সাফ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে সেতু। মহকুমার বৈধ বালি ব্যবসায়ীদের পক্ষে সুব্রত সামন্ত জানান, বালি ব্যবসা ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ভাল ছিল। তখন চুরি হলেও এমন ভাবে লুঠ হত না। এখন অবাধে বালি লুঠ হলেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন