আমতা-২ ব্লক

নেই ব্যাঙ্ক, সরকারি ভাতা পেতে হয়রান দ্বীপাঞ্চলের মানুষ

কোনও ব্যাঙ্ক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের দ্বীপাঞ্চল-সহ আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষকে। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি ভাবে চালু করা ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার পদ্ধতির (উপভোক্তাদের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাঁদের অ্যাকাউন্টে চলে আসা) সুবিধা পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

আমতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫০
Share:

কোনও ব্যাঙ্ক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের দ্বীপাঞ্চল-সহ আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষকে। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি ভাবে চালু করা ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার পদ্ধতির (উপভোক্তাদের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাঁদের অ্যাকাউন্টে চলে আসা) সুবিধা পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

Advertisement

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা যাতে দ্রুত উপভোক্তারা পায় সে জন্য তাঁদের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা আবশ্যিক করেছে প্রশাসন। ফলে সরাসরি উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসছে। এর ফলে তাঁরা উপকৃত হচ্ছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার জনধন যোজনা চালু করে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমতা-২ ব্লকের বহু মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। কারণ হাওড়ার দ্বীপাঞ্চল (ভাটোরা, ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান অঞ্চল)-সহ কাশমলি অঞ্চলে আজ পর্যন্ত কোনও ব্যাঙ্ক নেই। বাসিন্দাদের ছুটতে হয় অন্য ব্লকে। ১০-১২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাঁরা অন্য ব্লকে গিয়ে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পান। ফলে সেখানেও বাড়ছে ভিড়। ব্যাঙ্কে কাজের চাপ থাকায় ব্যাঙ্কিংয়ের কাজ সেরে ঘরে ফিরতে সন্ধে গড়িয়ে যায়। তার উপর কোনও কোনও কাজের জন্য একাধিকবার ব্যাঙ্কে যেতে হলে অন্য কাজকর্ম পণ্ড হচ্ছে। পাশাপাসি সময়, অর্থ দুইয়েরই অপচয় হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনিক কর্তাদের তাঁদের সমস্যার কথা একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা থেকেই গিয়েছে।

আমতা-২ এর বিডিও ইন্দ্রকুমার নস্কর ও সভাপতি মিঠু বারুই বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময়ে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। জানানো হয়েছে জেলার লিড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেও। সেই সঙ্গে এলাকায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলার আবেদনও জানিয়েছি। সকলেই আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার।”

Advertisement

হাওড়া জেলা লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মাধাই চন্দ্র নন্দী বলেন, “সমস্যার কথা জানি। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই এলাকায় যাতে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা যায় তার চেষ্টা চলছে। তিনটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এলাকা পরিদর্শনও করেছে। আশা করছি শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ভাটোরো, ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান অঞ্চলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। কিন্তু ঘোড়াবেড়িয়ায় রয়েছে মাত্র একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক নেই। কাশমলিরও একই অবস্থা। ফলে ওই সব এলাকার লোকেদের নির্ভর করতে হয় বাগনান-১ ব্লকের বক্সিহাটে থাকা একটি মাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উপর। ইন্দিরা আবাস, ১০০ দিনের কাজ, বার্ধক্যভাতা থেকে কন্যাশ্রী সমস্ত প্রকল্পের টাকা তাঁদের নিতে হয় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকেই। এ ছাড়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের টাকাও আসে ওই ব্যাঙ্কে। ফলে সেখানে কাজের চাপও যথেষ্ট। বক্সিহাট এলাকায় অন্য ব্যাঙ্ক থাকলেও কাজের চাপের কারণে তারা ভাটোরা, ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান, কাশমলি অঞ্চলের কাজের ঝামেলা নিতে চায় না বলে পঞ্চায়েতগুলির অভিযোগ।

ভাটোরার পঞ্চায়েত প্রধান অর্ধেন্দু আলু বলেন, “ব্যাঙ্ক না থাকায় আমাদের প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। উন্নয়নমূলক কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা চাই, এলাকায় দ্রুত কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক হোক।”

উত্তর ভাটোরার বাসিন্দা বংশীবদন পাত্র ও নিরাপদ পাত্র বলেন, “বক্সিহাট ব্যাঙ্কে যেতে হলে প্রায় ৫০ টাকা খরচ হয়। আবার অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষ বার্ধক্য ভাতা নিতে গেলে গাড়িতে তিন থেকে চারশো টাকা খরচ পড়ে যায়। তার উপর সারা দিন কেটে যায়। দিনের পর দিন এমন সমস্যা নিয়েই চলতে হচ্ছে। অথছ কেন্দ্রীয় সরকার জনধন যোজনায় ব্যাঙ্কে অবশ্যই অ্যাকাউমন্ট খুলতে বলছে। কিন্তু এলাকায় ব্যাঙ্কই যদি না থাকে তো খাতা খুব কোথায়?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন