নিগৃহীত প্রধান শিক্ষক উৎপল সরকার। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুব্রত জানা
মিড-ডে মিলের রান্নাঘর গড়া নিয়ে উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দিন কয়েক ধরেই গোলমাল চলছিল কিছু গ্রামবাসীর। তার জেরে বুধবার উৎপলকুমার সরকার নামে ওই প্রধান শিক্ষককে মারধর এবং ঝাঁটা-জুতো পেটা করার অভিযোগ উঠল গ্রামের কিছু মহিলার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মহিলারা আবার উৎপলবাবুর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার তেতে ওঠে কুশবেড়িয়া গ্রাম। প্রধান শিক্ষককে নিগ্রহের প্রতিবাদে এ দিন ক্লাস করেনি ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের একাংশ ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করে থানায় গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। শেষ পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
উৎপলবাবুর অভিযোগ, “স্কুলের জমিতেই রান্নাঘর বানাচ্ছিলাম। স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা নানা অজুহাতে ওই কাজে বাধা দিচ্ছে। টাকা চাইছে। ওরাই ওই নির্মাণ করতে চায়। তা দিইনি বলেই মহিলাদের দিয়ে আমাকে মারধর করাল। পিছনে দাঁড়িয়ে ওরা ইন্ধন জুগিয়েছে।” তাঁর দাবি, “আমার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।”
যে সব গ্রামবাসীর সঙ্গে উৎপলবাবুর গোলমাল চলছিল, তাঁদের পক্ষে লাল্টু নায়েকের দাবি, “জমিজমা নিয়ে বিবাদ হয়েছে ঠিকই। মহিলারা মাস্টারমশাইকে ধাক্কাধাক্কিও করেছেন। তবে, তাঁকে মারা হয়নি। মাস্টারমশাই মিথ্যা কথা বলছেন।” লাল্টুবাবু তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তবে ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। পুলিশ গ্রামে তল্লাশি চালিয়েছে। রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত মহিলাদের কাউকে ধরা যায়নি। তাঁরা পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত সোমবার থেকে স্কুলের সামনে, রাস্তার ধারে ওই রান্নাঘর তৈরি হচ্ছে সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের টাকায়। নির্মাণ নিয়ে আপত্তি তোলেন কিছু গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, ওই জমিতে রান্নাঘর হলে রাস্তার অনেকটাই দখল হয়ে যাবে। তাতে যাতায়াতে সমস্যা হবে। কেউ কেউ জমিটি তাঁদের বলেও দাবি করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রথম থেকেই জমিটি স্কুলের বলে দাবি করে আসছেন। একই বক্তব্য মহকুমা প্রশাসনেরও। এই টানাপড়েনের মধ্যেই নির্মাণ চলছিল। কিন্তু বুধবার দুপুরে গ্রামবাসীদের একাংশের বাধায় নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান শিক্ষক মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে সমস্যার কথা জানান। পরে পুলিশেরও দ্বারস্থ হন। পুলিশ গিয়ে নির্মাণকাজ চালু করায়।
বুধবার বিকেলে ছুটির পরে প্রধান শিক্ষক যখন স্কুল থেকে বেরোতে যাবেন, তখনই তাঁর উপরে জনা কুড়ি মহিলা ঝাঁটা-জুতো নিয়ে চড়াও হয় এবং তাঁর মোবাইল ফোন ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। উৎপলবাবু থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে পুলিশ তাঁকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখে এবং এফআইআর-এর প্রতিলিপি দেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে ওই প্রধান শিক্ষকের। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানেনি।
এ দিন থানায় বিক্ষোভে সামিল হওয়া অভিভাবকেরা বলেন, “প্রধান শিক্ষককে যে ভাবে মারধর করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবাদ করতেই হতো।”