পাশে প্রশাসন, বন্ধ হল দুই নাবালিকার বিয়ে

দু’জনেরই বাবা-মা বিলক্ষণ জানতেন, ১৮ বছর না পেরোলে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও ‘সুপাত্র’ পেয়ে হাতছাড়া করতে চাননি। ছাদনাতলায় বসা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। খবর পেয়ে তৎপরতার সঙ্গে দুই নাবালিকার বিয়ে রুখে দিল প্রশাসন। দু’টি ঘটনাই হুগলির চণ্ডীতলার। একটি মেয়ের বাড়ি গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েতের হোজাঘাটা। অন্য জন নৈটির চিকরণ্ড ফুলপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৩
Share:

দু’জনেরই বাবা-মা বিলক্ষণ জানতেন, ১৮ বছর না পেরোলে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও ‘সুপাত্র’ পেয়ে হাতছাড়া করতে চাননি। ছাদনাতলায় বসা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। খবর পেয়ে তৎপরতার সঙ্গে দুই নাবালিকার বিয়ে রুখে দিল প্রশাসন।

Advertisement

দু’টি ঘটনাই হুগলির চণ্ডীতলার। একটি মেয়ের বাড়ি গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েতের হোজাঘাটা। অন্য জন নৈটির চিকরণ্ড ফুলপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকে। প্রশাসনের আধিকারিকরা তাদের বাড়ির লোককে বোঝান। শেষ পর্যন্ত বিয়ে আটকে যাওয়ায় ঘরকন্নার পরিবর্তে ফের মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে, এই ভেবে দুই নাবালিকাই খুশি। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদার বলেন, “খবর পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাবালিকা বিবাহ রুখতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।”

হোজাঘাটার বছর ষোলোর ওই কিশোরী স্থানীয় কৃষ্ণরামপুরের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা দিনমজুর। সম্প্রতি তার বিয়ে ঠিক হয় চণ্ডীতলারই হরিপুর পঞ্চায়েতের রাধাবল্লভপুর গ্রামে। পাত্র অবশ্য তার চেয়ে বয়সে অনেকটাই বড়। আরবে গয়নার কাজ করেন। ‘ভাল’ পাত্র পেয়ে কিশোরীর অভিভাবকেরা তড়িঘড়ি তার বিয়ে ঠিক করেছিলেন। আগামীকাল, শনিবার বিয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সূত্র মারফত সেই খবর পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিডিও এবং পুলিশকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ে আটকানোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন।

Advertisement

চণ্ডীতলা১ এর ব্লকের বিডিও পৃথ্বীশ সামন্ত এবং চণ্ডীতলা থানার ওসি তাপস সিংহ দুপুরেই কিশোরীর বাড়ি পৌঁছে যান। তার বাবা-মাকে বিডিও বলেন, ‘‘মেয়ের আঠারো বছর না হলে বিয়ে দেওয়া কোনওমতেই চলবে না। অন্যথায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” নাবালিকা বিয়ে দিলে কি কি সমস্যা হতে পারে, সে বিষয়েও তাঁদের জানান বিডিও। মেয়েটির বাবা তাঁকে জানান, এ সব তাঁরা জানেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ার জন্যই তাঁরা এ কাজে এগিয়েছিলেন। মেয়েটির মায়ের বক্তব্য, “ছেলের বাড়ি থেকে বলেছিল মেয়েকে পড়াশোনা শেখাবে। কম্পিউটার শেখাবে। তাই সম্পর্ক হাতছাড়া করতে চাইনি।”

কিশোরীর সঙ্গেও বিডিও এবং ওসি কথা বলেন। সে বলে, “সামনেই মাধ্যমিক। পড়াশোনা করে চাকরি করতে চাই। চাকরি না পেলে টিউশনি করব। বাবা-মাকে বলেছিলাম, এখনই বিয়ে করতে চাই না। ওঁরা শুনল না।” বিডিও কিশোরীকে আশ্বাস দেন, ভাল কম্পিউটার জানলে তিনি তার কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন। পড়াশোনা চালানোর জন্য তাকে মাসে পাঁচশো টাকা করে সাহায্যের আশ্বাস দেন ওসিও।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই চণ্ডীতলা-২ ব্লকের পাঁচঘড়া কোলেপাড়ার ১৭ বছরের আর এক কিশোরীর বিয়ের কথা প্রশাসনিক কর্তাদের কানে আসে। চিকরণ্ড ফুলপাড়ার এক যুবকের সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আজ, শুক্রবার। মেয়েটি যে স্কুলে পড়ে, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অলোক মিত্র কোনওভাবে বিষয়টি জানতে পেরে প্রশাসনকে খবর দেন। এর পরই মেয়ে এবং পাত্রপক্ষকে চণ্ডীতলা থানায় ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে ওসি তাপসবাবু ছাড়াও ব্লক সমাজকল্যাণ আধিকারিক বিপ্লবকুমার বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সন্টু রিট-সহ এলাকার অন্য জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। দুই পরিবারকে বোঝানোর পরে তাঁরা জানিয়ে দেন, মেয়ের আঠারো বছর না হলে তার বিয়ের চেষ্টা আর করবেন না। এ ব্যাপারে নিজেদের লিখিত বক্তব্যও প্রশাসনের কাছে দেন তাঁরা।

গত রবিবারই চিকরণ্ডের আর এক স্কুলছাত্রীর বিয়ে আটকে যায় প্রশাসনিক তৎপরতায়। মহকুমাশাসকের কথায়, “নাবালিকা বিয়ে আটকাতে সরকারের তরফে কন্যাশ্রী-সহ নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে নিরন্তর প্রচার চলছে। মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। তবু এ ধরনের ঘটনা আটকাতে প্রশাসন সব সময়েই তৎপর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন