সিঁদুরদানের সময়ই কথাটা কানে এসেছিল কনের। পাত্রের মুখের চেহারাও অনেক কিছু বলে দিচ্ছিল তাঁকে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতেই মনস্থির করে ফেলেছিলেন এম কম পড়ুয়া মেয়েটি। ভোর রাতে বিয়ের বাসর থেকে সোজা চলে যান শ্রীরামপুর থানায়। পুলিশকে জানান, এই বিয়ে তিনি ভেঙে দিতে চান।
কেন এমন সিদ্ধান্ত? ওই তরুণী জানিয়েছেন, কাটোয়াবাসী ওই পাত্রের সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়ে গিয়েছিল আগেই। তখন দাবিদাওয়ার কোনও কথাই ওঠেনি। কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠান যত এগিয়ে এসেছে, ততই আসে সোনার গয়নাগাঁটি আর সেগুন কাঠের আসবাবের দাবি। মঙ্গলবার বিয়ের অনুষ্ঠান চলার সময়ে পাত্রপক্ষ গয়নার ওজন নিয়ে নালিশ শুরু করে। তাঁদের আক্ষেপ, পাত্রের আংটি ওজনদার নয়। কনেকে যে পরিমাণ সোনা দিয়ে সাজানো হয়েছে, তাতেও মন ভরেনি পাত্রপক্ষের। কন্যাপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়, বিয়ের মন্ত্রোচ্চারণের সময়ই বরপক্ষের দিক থেকে পণ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ভেসে আসছিল। তাতে তাঁরা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যান।
বিয়ের আসরে পাত্রের আত্মীয়দের এমন আচরণ দেখে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন ওই তরুণী। বিয়ের রাতেই পণ নিয়ে বিরক্তি যদি মাত্রাছাড়া হয়, তাহলে পরবর্তী জীবনে কী অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য? সেই আশঙ্কা থেকে শেষমেশ তাঁর সিদ্ধান্ত, এই বিয়ে মেনে নেওয়া যাবে না। তাই সবার অলক্ষ্যে শ্রীরামপুরের বড়বাগান এলাকার ওই পাত্রী বিয়ের বাসর থেকে ভোরে উঠে সোজা চলে যান থানায়।
শ্রীরামপুর থানার আইসি প্রিয়ব্রত বক্সির কাছে ওই তরুণী সব ঘটনা খুলে বললে, পুলিশ মেয়েটির পাশে দাঁড়ায়। বরপক্ষকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে পুলিশই তাঁদের কাছে ওই তরুণীর মনোভাব স্পষ্ট করে দেন। সব শুনে বরপক্ষ অবশ্য কোনও ওজর-আপত্তি করেনি। বুধবার চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট ওই পাত্র একাই কাটোয়ায় তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। এ বার উভয় পক্ষের মতে ডিভোর্সের তোড়জোড় শুরু হবে আশা করছেন শ্রীরামপুরের তরুণীর পরিবার। পিতৃহীন ও তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দিদি ও মাসি। তাঁর মা ভেঙে পড়েছেন। এ দিন রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবে পণের প্রতিবাদ করে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার এই সাহসকে কুর্নিস করেছেন অনেকেই। পুলিশ সূত্রে খবর, গত তিন মাসে শ্রীরামপুরেই পণের বলি হয়েছেন একাধিক বধূ। চুঁচুড়া জেলা আদালতের আইনজীবী সুশান্ত সেনগুপ্ত বলেন, “পণের বলি হয়েও মেয়েরা মুখ ফুটে তা বলতে চান না। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। সেখানে এই মেয়েটি সকলের থেকে আলাদা।” এ দিন তরুণীর আপসহীন মনোভাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মেয়েটিকে সব রকম আইনি সহায়তা দিতে আমি প্রস্তুত। শ্রীরামপুরের এসডিপিও অর্ণব বিশ্বাস বলেন, “ওই সাহসী তরুণীকে সব রকম সহায়তা করবে পুলিশ।”