বাড়ছে ধানের ফলন, সবুজ বিপ্লবে সাড়া আরামবাগে

প্রায় তিন বছর পরে আরামবাগ মহকুমায় কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাফল্য পেল ‘সবুজ বিপ্লব’। প্রকল্পের আওতায় মহকুমা জুড়ে থাকা ২২টি প্রদর্শনী ক্ষেত্রের ২২০০ হেক্টর জমিতে বিঘাপিছু ২০ থেকে ২২ মণ আমন ধানের ফলন মিলেছে। রোগপোকারও আক্রমণ নেই। এত দিন ওই পরিমাণ জমি থেকে ১৬-১৮ মণ ধান পেতেই কালঘাম ছুটত চাষিদের। এ বার উত্‌পাদনের বহর দেখে চমকে গিয়েছেন চাষিরাই।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৬
Share:

আরামবাগে ব্লক কৃষি খামারে যন্ত্রের সাহায্যে আমন ধান কাটা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রায় তিন বছর পরে আরামবাগ মহকুমায় কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাফল্য পেল ‘সবুজ বিপ্লব’। প্রকল্পের আওতায় মহকুমা জুড়ে থাকা ২২টি প্রদর্শনী ক্ষেত্রের ২২০০ হেক্টর জমিতে বিঘাপিছু ২০ থেকে ২২ মণ আমন ধানের ফলন মিলেছে। রোগপোকারও আক্রমণ নেই। এত দিন ওই পরিমাণ জমি থেকে ১৬-১৮ মণ ধান পেতেই কালঘাম ছুটত চাষিদের। এ বার উত্‌পাদনের বহর দেখে চমকে গিয়েছেন চাষিরাই।

Advertisement

প্রকল্পে সামিল হওয়া চাষিদের মধ্যে আরামবাগের ডোঙ্গলের রতন মাজি বলেন, “কৃষি দফতর নামে যে একটা দফতর আছে তার অস্তিত্ব আগে টের পেতাম না। এখন দফতরের আধিকারিকেরা মাঠে নেমে চাষিদের হাতে-কলমে কাজ শেখাচ্ছেন। ফলে, ফলন বাড়ছে।”

হরিণখোলার সুজয় মালিক নামে আর এক চাষি বলেন, “আমন ধানের ক্ষেত্রে স্বণর্র্মাসুরি বা আম্রপালি চাষ করে বিঘা পিছু ১৬ মন ধান পেলেই অনেক পেয়েছি ভাবতাম। এখন সেই বিঘাপিছু একই প্রজাতির ধান পেয়েছি ২০ মণের উপর।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পূর্ব হরিপুরের কেশব সরকার বা খানাকুল, গোঘাট, পুড়শুড়ার চাষিরাও।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘সবুজ বিপ্লব’ প্রকল্পটি কেন্দ্রের। সূচনা হয় ২০১১-১২ অর্থবর্ষে। হুগলি জেলায় চালু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পে এক লপ্তে এক হাজার হেক্টর জমিকে ‘প্রদর্শনী ক্ষেত্র’ হিসেবে বেছে নিয়ে উন্নত পদ্ধতিতে খরিফ ধানের (আমন ও আউস) চাষ করে ফলন এবং শস্য নিবিড়তা বাড়ানোতে জোর দেওয়া হয়। তা ছাড়াও, চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রতিটি ধাপে মাঠে নেমে হাতে-কলমে কৃষি দফতরের বিশেষজ্ঞদের শেখানোর কথা।

কিন্তু হুগলি-সহ রাজ্যে এক লপ্তে এক হাজার হেক্টর জমির সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রকল্পটি রূপায়ণে দেরি হয়। ২০১২ সাল নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫০ হেক্টর জমিতে ওই প্রকল্প রূপায়ণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম বছর ২৫০ হেক্টরের ক্ষেত্রগুলি বাছাই করতে গিয়েও সমস্যা হয়। প্রকল্পের বিশেষ সুফলও মেলেনি। প্রথম বছর হুগলিতে মোট ২৬টি প্রদর্শনী ক্ষেত্র হয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে একলপ্তে ১০০ হেক্টর জমি নিয়ে প্রদর্শনী

ক্ষেত্র করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্য স্তরে। এক-একটি প্রকল্প এলাকায় ১০০ হেক্টর জমিপিছু প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ চাষির মালিকানা রয়েছে। সেই সব চাষি হাতে-কলমে কৃষি দফতরের সহায়তা পাওয়া ছাড়াও আপাতত সরকারি খরচে জমির মাটি পরীক্ষা করাতে পারবেন। বিনামূল্যে বীজ, বীজ শোধনের ওষুধ, আগাছানাশকও পাবেন। প্রয়োজনে মিলবে কীটনাশক এবং রোগনাশক ওষুধ ও অনুখাদ্য। ১০০ হেক্টর জমিপিছু এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।

কিন্তু গত দু’বার ‘সবুজ বিপ্লব’ প্রকল্পে সাফল্য মেলেনি কেন?

মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকারের দাবি, চাষিদের প্রশিক্ষণ নিয়ে উত্‌সাহ ছিল না। রোগপোকার আক্রমণ যথাযথ ভাবে দমন করা যায়নি। এ বার বিশেষ তদারকি করে প্রশিক্ষণ দেওয়া গিয়েছে। তা ছাড়াও বীজ ধানের প্রজাতি এ বার তুলনামূলক ভাবে ভাল ছিল। চাষিদের আগ্রহে ইতিমধ্যে ৪৪টা প্রশিক্ষণ শিবিরও করা হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “সবুজ বিপ্লবের সাফল্যকে কেন্দ্র করে চাষিদের সঙ্গে দফতরের যোগাযোগ বেড়েছে। দফতরের প্রতি তাঁদের আস্থাও বেড়েছে। এটা কম পাওনা নয়।” জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক শান্তিরঞ্জন সরকার বলেন, “সবুজ বিপ্লবে ক্রমশ সাফল্য আসছে। সারা জেলায় পঞ্চাশেরও বেশি প্রদর্শনী ক্ষেত্র হয়েছে। বোরো মরসুমে প্রদর্শনী ক্ষেত্র আরও বাড়বে।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে ভবিষ্যতে পাম্পসেট-সহ নানা কৃষি সরঞ্জাম দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। গঠন করা হবে ‘ফার্মার্স ক্লাব’। পর্যায় ক্রমে ১০০ জন করে চাষির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার এবং প্রকল্পের অধীন দু’জন করে প্রগতিশীল চাষিকে ৬ মাস তদারকির জন্য নিয়োগ করা হবে মাসিক ২০০০ টাকা বেতনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন