মেলেনি বকেয়া, মারাই গেলেন এক জুট শ্রমিক

বার বার আবেদনের পরও বেকেয়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত অভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল এক জুটমিল শ্রমিকের। মৃতের নাম মহম্মদ মুস্তাফা। শুধু ওই শ্রমিকই নন, ভদ্রেশ্বরের গোন্দলপাড়া জুটমিলের আরও বেশ কিছু এমনই শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা বকেয়ার জন্য বার বার আবেদন করলেও কোনও সুরাহা পাননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

বার বার আবেদনের পরও বেকেয়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত অভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল এক জুটমিল শ্রমিকের। মৃতের নাম মহম্মদ মুস্তাফা।

Advertisement

শুধু ওই শ্রমিকই নন, ভদ্রেশ্বরের গোন্দলপাড়া জুটমিলের আরও বেশ কিছু এমনই শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা বকেয়ার জন্য বার বার আবেদন করলেও কোনও সুরাহা পাননি। এই ব্যাপারে মিল কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসন কারও কোনও মাথাব্যাথা নেই বলে অভিযোগ ওই শ্রমিকদের। ওই সব শ্রমিকের আবেদনের ভিত্তিতে সার্টিফিকেট মামলা জেলাশাসকের দফতরে মাসের পর মাস বকেয়া পড়ে রয়েছে। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরও এক শ্রমিক তাঁর বকেয়া পাননি। এক শ্রমিক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও চিকিত্‌সা করাতে পারছেন না অর্থের অভাবে। নিমাই পাত্র নামে ওই শ্রমিকও দীর্ঘদিন আগে অবসর নিয়েছেন। তাঁর অসুস্থতার কথা মিল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও ফল পাননি তিনি।

হুগলি শিল্পাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে কাজ করেও বকেয়া না পাওয়াটা জুটমিলের শ্রমিকদের দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত গোন্দলপাড়া জুটমিলেরই অন্তত আটজন শ্রমিকের বকেয়া ঝুলে রয়েছে হুগলি জেলাশাসকের দফতরে। তাঁদের মধ্যে এমনও শ্রমিকরা রয়েছেন যাঁরা ২০০৬ বা ২০০৭ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে বকেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁরা চন্দননগরের সহকারি শ্রম কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন। তার ভিত্তিতে মিল কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছেন শ্রম কমিশনার। এরপর সেই আবেদন অনুমোদন করার জন্য বিধিবদ্ধভাবে জেলাশাসকের দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দু’পক্ষের শুনানি শেষ করে জেলাশাসকের দফতর থেকে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এ পর্যন্ত দেননি জেলাশাসক।

Advertisement

গোন্দলপাড়া জুটমিলের মৃত শ্রমিক মহম্মদ মুস্তাফা ২০০৬ সালে অবসর নেন। ২০০৭ সালে তিনি লেবার কোর্টে আবেদন করেন। সেই আবেদন কার্যকারি হতে টানা ৬ বছর অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। ২০১৩ সালে ওই শ্রমিককে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এরপর তিনি টাকা পাননি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। শেষমেষ মারাই গেলেন তিনি। ওই মিলেরই শ্যামল কুমার পন্ডিত, নির্মল হীরা, দেবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্কর প্রসাদ মাইতি, জয়দেব শীল, সুনীল দাসদের পরিস্থিতিও একই। এই ভাবে বকেয়া না পাওয়া শ্রমিকদের তালিকা ক্রমশ বেড়ে চললেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।

করুণাময় দাসের পরিস্থিতি আরও খারাপ। বকেয়া না পেয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালত তাঁর পাওনা দ্রুত মেটানোর নির্দেশও দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে হুগলির জেলা শাসক মনমীত নন্দা বলেন,“আমরা অনুমোদন করে দিই। কিন্তু অনেক সময় মিল মালিকেরা শ্রমিকের টাকা দেওয়ার সেই নির্দেশ মানছেন না। এরপর মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তাতেই আনেকটা সময় চলে যাচ্ছে।” জুট শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে চন্দননগরের আইনি সহায়তা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের আইনজীবী বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “মিল মালিকেরা নিয়মের কোনও তোয়াক্কা করেন না। অনেক ক্ষেত্রে জেলাশাসকের দফতরেও শ্রমিকদের বকেয়া নিয়ে শুনানিতে অনেক দেরি হচ্ছে। এতে বহু সময় নষ্ট হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন