হাসপাতাল রোড ওয়ান ওয়ে হলেও মানে না কেউ। যার পরিণাম নিত্য যানজট।
একটা রাস্তা খুঁজছে আরামবাগ।
তারকেশ্বর-আরামবাগ রোড এবং হাসপাতাল রোডকে কেন্দ্র করেই।
রাস্তা অপরিসর হয়েছে বেআইনি যানবাহন, হকারের দৌরাত্ম্য এবং ইমারতি সরঞ্জাম ফেলে রাখার কারণে। আর বেহাল হয়েছে পূর্ত দফতর এবং পুরসভা ঠিকমতো দেখভাল না করায় এমন অভিযোগ পুর এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের।
তাই পুর এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাইপাসের। সেই বাইপাসের প্রয়োজনীয়তার কথা মেনে নিয়েছেন পুরসভা এবং পূর্ত দফতরের কর্তারাও। কিন্তু সেই কাজ কবে হবে, সে ব্যাপারে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি তাঁরা।
পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “এখানে বাইপাস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তাভাবনা ছিলই। পুরসভার তরফেও তাঁর কাছে সম্প্রতি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাইপাসের জন্য শহরের উত্তর দিক দিয়ে রেললাইন সংলগ্ন রাস্তা বরাবর একটা প্রাথমিক খসড়াও করা হয়েছে।” মহকুমা পুর্ত দফতরের এক কর্তাও মনে করেন, বাইপাস জরুরি। তবে, একই সঙ্গে তাঁর সংশয়, “যেখানে জমি অধিগ্রহণ না করে জমি দেওয়ার উপর নির্ভর করতে হয়, সেখানে বাইপাস তৈরি কি আদৌও সম্ভব!”
শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড মিলিয়ে পূর্ত দফতরের রাস্তা রয়েছে প্রায় ৫৫ কিমি। সেই রাস্তার অধিকাংশই ভাঙা। যেমন, বসন্তপুর মোড় থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাদলকোনা গ্রাম ছুঁয়ে তিরোল রোডে যে রাস্তাটি মিশেছে, বিবেকানন্দ পল্লির রাস্তা, মনসাতলা থেকে বিক্রমপুর রাস্তা, নওপাড়া থেকে চাঁদুর রাস্তা। পল্লিশ্রী থেকে মহকুমাশাসকের অফিস ছুঁয়ে যে রাস্তাটি পিসি সেন রোডে পড়েছে সেটিও ভাঙাচোরা। বেআইনি যান এবং হকারের কারণে পিসি সেন রোড এমনই সংঙ্কীর্ণ যে পথ চলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে পথচারীদের।
পুরসভার অধীনস্থ রাস্তাগুলির অধিকাংশ খাতায়-কলমে ১২ থেকে ২০ ফুট চওড়া। কিন্তু যান চলাচলের সেই পরিসর প্রায় কোথাও নেই। বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার অংশ ছাড় না রেখেই বাড়ি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবেই বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। তারকেশ্বর-আরামবাগ রোড পূর্ত দফতর (সাধারণ) দেখভাল করে। শহরের মধ্যে পারুল থেকে পল্লিশ্রী পর্যন্ত বিস্তৃত অহল্যাবাঈ রোডের (লিঙ্ক রোড) দু’ধারে এক কিমি করে দখল করে স্থানীয় বাসিন্দারা ইমারতি সরঞ্জাম রাখেন বলে অভিযোগ। ফলে, মোট ৪৭ ফুট চওড়া রাস্তাটির মধ্যে গাড়ি চলাচলযোগ্য থাকে খুব বেশি ২২ ফুট। তা-ও যানজটে প্রতি পদে থামতে যান-চালকদের।
নেতাজি স্কোয়ার সংলগ্ন লিঙ্ক রোড থেকে হাসপাতাল রোডে ঢোকার মুখে সারি সারি দোকানের সিঁড়ি হয়েছে রাস্তা দখল করে। তার পরেও রাস্তার সামনে নানা পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। ফলে, ২৪ ঘণ্টাই গাড়ি-রিকশার ভিড় লেগে থাকে রাস্তায়। যানজটে নাকাল হন যাত্রীরা। বাম আমলে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু ফের হকার বসে যায়।
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার সংযোগস্থল এই শহর। ফলে, প্রতিদিনই এ শহরে গাড়ির ভিড় বাড়ছে। কিন্তু গতি বাড়ছে না। বাইপাস কবে হবে, আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে আরামবাগবাসীর। শহরকে যানজট মুক্ত করতে প্রশাসনিক গাফিলতিরও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। যেমন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃপা রায় নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “বাইপাস পরের কথা। অবিলম্বে রাস্তা যানজটমুক্ত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।” ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দিমহলের বাসিন্দা তথা আরামবাগ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ সাজিদুল ইসলাম মনে করেন, “আরামবাগে বাইপাস না হলে সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলবে না।”
পুরসভা এবং পূর্ত দফতর অবশ্য দাবি করেছে, নিয়ম মেনে রাস্তা সংস্কার করা হয়। কিন্তু ফি-বছর যে ভাবে গাড়ির চাপ বাড়ছে, তাতে রাস্তা দ্রুত ভাঙছে। রাস্তায় দখলদারি হটানো নিয়ে পুরসভা বা পূর্ত দফতরের কর্তারা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে, যানজটমুক্তির জন্য সম্প্রতি পুরসভা এবং পুলিশকে নিয়ে এক দফা বৈঠক করেন মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু। তিনি জানিয়েছেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। নেতাজি স্কোয়ার-সহ কিছু জায়গায় ‘নো-পার্কিং জোন’ হবে। বাসস্ট্যান্ডে ঢোকা-বেরোনোর মুখে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র জানিয়েছেন, শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। বেআইনি ভাবে রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য রাখা যাবে না। রাস্তা দখল করে রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে আগেও এমন নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক তরফে। তবু, সমস্যা মেটেনি। এ বারও সমস্যা মিটবে কি না, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা।
ছবি: মোহন দাস।