হুগলি

যুবককে মার, দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ

পুলিশকে মারধর করছে দুষ্কৃতী। রাস্তায় দাপাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে। রাজ্যে পুলিশকর্মীদের উপরে হামলার ঘটনাস্থলের তালিকায় এ বার নাম তুলে ফেলল হুগলি। স্ত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় নৈহাটি-ব্যান্ডেল শাখার হুগলি স্টেশনের কাছে এক যুবককে রাস্তায় ফেলে মারছিল কিছু দুষ্কৃতী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৭
Share:

আক্রান্ত পুলিশকর্মী প্রবীর দত্ত (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

পুলিশকে মারধর করছে দুষ্কৃতী। রাস্তায় দাপাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে। রাজ্যে পুলিশকর্মীদের উপরে হামলার ঘটনাস্থলের তালিকায় এ বার নাম তুলে ফেলল হুগলি।

Advertisement

স্ত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় নৈহাটি-ব্যান্ডেল শাখার হুগলি স্টেশনের কাছে এক যুবককে রাস্তায় ফেলে মারছিল কিছু দুষ্কৃতী। তাঁকে উদ্ধারের পরে হামলাকারীদের ধরতে গিয়ে মার খেলেন এক পুলিশকর্মী। তাঁর সঙ্গী লাঠিধারী দুই কনস্টেবলকে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দাঁড় করিয়ে রেখে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে শূন্যে গুলি ছুড়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলের এই ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।

গত কয়েক মাসে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। পুলিশের নিরাপত্তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। গত সেপ্টেম্বরে বোলপুর থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এক যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। তার আগে দুবরাজপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে বোমার ঘায়ে মারা যান এসআই অমিত চক্রবর্তী। গত অক্টোবরে বেহালায় শব্দবাজি ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হন দুই পুলিশকর্মী। নভেম্বরে আলিপুর থানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ওই মাসেই শিলিগুড়িতে আইসি-র গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন এই ঘটনা।

Advertisement

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্যান্ডেলের নলডাঙা এলাকার এক দম্পতি এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ হুগলি স্টেশনের কাছের একটি বিনোদন পার্ক থেকে হেঁটে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। মহিলার উদ্দেশে কটূক্তি করে এলাকার এক দল যুবক। মহিলার স্বামী প্রতিবাদ করেন। এর পরেই ওই যুবকেরা মহিলার স্বামীকে টেনে একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর শুরু করে। আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়েও তাঁকে মারা হয়। তাঁর স্ত্রী ওই গলির মুখে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন।

তখনই ঘটনাস্থলে চলে আসে ব্যান্ডেল পুলিশ ফাঁড়ির একটি টহলদার গাড়ি। গাড়িতে ছিলেন ওই ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-ইনস্পেক্টর প্রবীর

দত্ত এবং দুই কনস্টেবল। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠি চালিয়ে হামলাকারীদের হাত থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করেন। কিছু ক্ষণ পরে প্রবীরবাবুরা ফের ওই গলিতে ঢোকেন হামলাকারীদের খোঁজে।

পুলিশের দাবি, ততক্ষণে ওই যুবক তাঁর আক্রাম্ত হওয়ার কথা ফোনে নলডাঙা এলাকায় পরিচিতদের জানিয়ে দেন। সেখান থেকে এক দল দুষ্কৃতী চলে আসে ওই গলিতে। দুষ্কৃতীদের দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হওয়ার উপক্রম হয়। তা না জেনেই আগের ঘটনায় হামলাকারীদের ধরার জন্য সেখানে পৌঁছন প্রবীরবাবু এবং দুই কনস্টেবল। পুলিশ-দুষ্কৃতী ধস্তাধস্তি বাধে। এক দুষ্কৃতীর ঘুষিতে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে প্রবীরবাবুর। এর পরে কয়েকজন দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র বের করে শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি ছুড়ে চম্পট দেয়। প্রবীরবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তবে ঘটনার পরে ওই দম্পতির খোঁজ পুলিশ পায়নি। পুলিশের অনুমান, গোলমালের আশঙ্কায় তাঁরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।

পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “দম্পতিকে কটূক্তি করা নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত। তার পরে তা দু’দল দুষ্কৃতীর সংঘর্ষের চেহারা নিতে যাচ্ছিল। হামলাকারীদের ধরতে গিয়েই এক পুলিশকর্মী আহত হন।” তিনি জানান, পুুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে হুগলি মোড় এলাকা থেকে এক জনকে আটক করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে।

হুগলি-ব্যান্ডেল এলাকায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডব নতুন নয়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে হুগলি মোড়ের কাছে কৃষ্ণপুর বাজারে দু’দল দুষ্কৃতীর গুলির লড়াইয়ে এক ছাত্রী-সহ দুই ট্রেনযাত্রী আহত হন। এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়। তার আগে ব্যান্ডেলে তোলা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। চলতি বছরের গোড়ায় চুঁচুড়ার নারকেলবাগান এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরনো এক বৃদ্ধার হার ছিনতাইয়ের পরে, তাঁকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। গত এপ্রিলে রবীন্দ্রনগরের একটি আবাসনে দু’দল দুষ্কৃতীর গুলির লড়াইয়ে এক দুষ্কৃতী মারা যায়। এক জন আহত হয়। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

জেলা সদর চুঁচুড়া এবং লাগোয়া এলাকায় দুষ্কৃতীদের এমন তাণ্ডব বন্ধে পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী নয়, এ অভিযোগও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। এ দিনের ঘটনার পরে সেই অভিযোগ ফের সামনে এসেছে। তবে, আতঙ্কে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরেই বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। বিনোদন পার্ক ফেরত মানুষেরা দ্রুত এলাকা ছাড়েন।

পুলিশের অবশ্য দাবি, দুষ্কৃতী-উপদ্রব বন্ধে তারা চেষ্টা চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন