অভিযুক্ত তৃণমূল

রাস্তায় ফেলে মারধর, জখম বিজেপি-র কর্মী

এক সময়ে তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন তৃণমূল কর্মী হিসেবে। বছর দুয়েক আগে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই ‘অপরাধে’ মাঝেমধ্যেই হুমকির পরে এ বার ওই প্রৌঢ় বিজেপি কর্মীকে ফোনে ডেকে রড ও রিভলভারের বাঁট দিয়ে মারধর এবং ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের নামে। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে নিগৃহীত হন তাঁর মেয়েও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মগরা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

জখম সুশান্তবাবু।

এক সময়ে তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন তৃণমূল কর্মী হিসেবে। বছর দুয়েক আগে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই ‘অপরাধে’ মাঝেমধ্যেই হুমকির পরে এ বার ওই প্রৌঢ় বিজেপি কর্মীকে ফোনে ডেকে রড ও রিভলভারের বাঁট দিয়ে মারধর এবং ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের নামে। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে নিগৃহীত হন তাঁর মেয়েও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার, দোলের বিকেলে মগরার ছোট খেজুরিয়া এলাকায় ওই ঘটনায় জখম সুশান্ত মণ্ডল নামে ওই প্রৌঢ়কে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর ডান চোখে গভীর ক্ষত হয়েছে। ভোজালির কোপ পড়ে তাঁর বাঁ হাতে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

গোটা ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ব্যান্ডেলের কেওটা এলাকার তৃণমূল কর্মী নিতাই পাল। সুশান্তবাবুও ওই এলাকার বাসিন্দা। নিতাইবাবুই বৃহস্পতিবার ফোন করে তাঁকে ডেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। যদিও নিতাইবাবু ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে সুশান্তবাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সারদা কাণ্ড-সহ তৃণমূলের নানা দুর্নীতি সহ্য করতে না পেরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। এ জন্য প্রায়ই আমাকে ওরা খুনের হুমকি দিত। এ বার নিতাই এলাকার বাইরে ডেকে মেরে ফেলার চেষ্টা করল।” নিতাইবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএস করলেও তাঁর কোনও উত্তর মেলেনি। তাঁর বাড়িতেও কেউ ছিলেন না।

Advertisement

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই ঘটনায় নিতাই পাল-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশান্তবাবু গাড়ির ব্যবসা করতেন। গাড়ি চালাতেনও। দোল উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি কল্যাণীতে দাদার বাড়ি যান। বিকেলে নিতাইবাবু তাঁকে ফোন করে এক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে জানিয়ে গাড়ি নিয়ে আসতে বলেন। সেই মতো মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সুশান্তবাবু।

সুশান্তবাবুর অভিযোগ, জিটি রোড ধরে ফেরার পথে মগরার ছোট খেজুরিয়ায় জনা সাতেক যুবক তাঁর পথ আটকায়। তাঁকে টেনে রাস্তার ধারের একটি বাড়ির পাশে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করে। রডের আঘাতে তাঁর কপাল ফাটে। রিভলভারের বাঁট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। হামলাকারীরা ভোজালি দিয়ে তাঁর গলায় আঘাত করতে গেলে তিনি বাঁ হাত দিয়ে বাধা দেওয়ায় চেষ্টা করেন। ফলে, তাঁর বাঁ হাতে গভীর ক্ষত হয়।

হামলার সময়ে সুশান্তবাবুর পরিচিত কয়েক জন ওই এলাকায় গিয়ে পড়েন। তাঁরাই সুশান্তবাবুর বাড়ির লোকজনকে খবর দেন। তাঁরা ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীরা সুশান্তবাবুর মেয়ে বৈশাখীকে ধাক্কা মেরে ফেলে পালায় বলে অভিযোগ। আসেন বিজেপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরাও। সুশান্তবাবু বলেন, “হামলাকারীরা ছ’সাত জন ছিল। কাউকে চিনি না। আমাদের এলাকারও নয়। ওরা বলছিল, ‘বিজেপির নেতা হওয়ার খুব শখ! এ বার মিটিয়ে দেব’। আগে যখন খুনের হুমকি পাচ্ছিলাম, তখন আর পুলিশকে জানাইনি। মনে হচ্ছে, সেটাই ভুল হয়েছিল।” সুশান্তবাবুর মেয়ে বৈশাখী বলেন, ‘‘বাবা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই আমাদের পরিবারের উপর এলাকার কিছু তৃণমূল সদস্যের আক্রোশ জন্মেছিল। সেই আক্রোশেই পরিকল্পিত ভাবে ফোন করে ডেকে বাবার উপরে হামলা করা হল।” বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পাল বলেন, ‘‘তৃণমূল বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে। কর্মীদের উপর হামলা করে আমাদের আটকানো যাবে না।” এ দিনের হামলা বা সুশান্তবাবুকে আগে খুনের হুমকির অভিযোগ মানেননি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, “হামলার সঙ্গে দলের যোগ নেই। দোল উপলক্ষে বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে গণ্ডগোলকে ঘিরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবুও স্থানীয় নেতৃত্বকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন