শুরুই হয়নি কাজ। পড়ে আছে শুধু শিলান্যাসের ফলক। —নিজস্ব চিত্র।
চার বছর আগে স্থাপন হয়েছিল ভিত্তিপ্রস্তর।
বরাদ্দ হয়েছিল সাত কোটি টাকা।
কিন্তু হাওড়ার চেঙ্গাইলে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা তৈরির কাজ এখনও শুরুই হল না। ফলে, প্রকল্পটি ঘোষণার সময়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাটির যে সব অভিভাবক ছেলেমেয়েদের ওই মাদ্রাসায় পড়ানোর কথা ভেবেছিলেন, তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবু, তাঁরা মনে করেন মাদ্রাসাটি হলে এলাকার ছেলেমেয়েরা উপকৃত হবে।
২০১০ সালে রাজ্যের তত্কালীন বামফ্রন্ট সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতির জন্য রাজ্যে ১২টি ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। তার মধ্যে চেঙ্গাইলেরটি হওয়ার কথা ছিল স্টেশন সংলগ্ন সাড়ে তিন একরের একটি খাসজমিতে। ওই বছরের ৯ অক্টোবর প্রস্তাবিত আবাসিক মাদ্রাসাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তত্কালীন সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী আব্দুস সাত্তার। তার পর থেকে চার বছরে কাজ এগোয়নি এতটুকুও। ফাঁকা জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু ভিত্তিপ্রস্তরটিই।
কেন এত দিনেও কাজ শুরু হল না?
প্রকল্পটি রূপায়ণ করার কথা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের। তারা মাদ্রাসাটি তৈরির দায়িত্ব দেয় পূর্ত দফতরকে। জেলা পূর্ত দফতরের এক কর্তার দাবি, প্রথমে তাঁরা মাদ্রাসাটি তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু জমিতে দখলদারি নিয়ে সমস্যা থাকায় তা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরকে জানানো হয়। তা মেটাতে রাজ্য সরকার উদ্যোগীও হয়। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে সরকারি তরফে এ নিয়ে আর পদক্ষেপ হয়নি। ফলে, কাজটি আটকে রয়েছে।
জেলা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি, “এখন প্রকল্পটি তৈরিতে কোনও বাধা নেই। বরাদ্দ টাকাও পড়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশ পেলেই কাজ শুরু করা যাবে।”
প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুস সাত্তার অবশ্য প্রকল্পটি না হওয়ার জন্য বর্তমান তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় চেঙ্গাইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। এটা হলে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হত। কিন্তু রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় পরিকল্পনাটি শেষ হয়ে যেতে বসেছে।”
প্রাক্তন মন্ত্রীর অভিযোগ অবশ্য মানেননি উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক হায়দার আজিজ সফি। তাঁর দাবি, “উদাসীনতার প্রশ্ন নেই। দেখছি কী ভাবে ওটা দ্রুত রূপায়ণ করা যায়। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” কিন্তু এত দিনেও কেন উদ্যোগী হননি, তার জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, ওই মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠক্রম চালু এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হস্টেল তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষেই প্রথম শ্রেণির ক্লাস চালু হওয়ারও কথা ছিল। প্রাথমিক ভাবে ওই শ্রেণিতে যাতে ১০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করতে পারে ও থাকতে পারে তার ব্যবস্থাও চলছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই না হওয়ায় হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে আনোয়ার আলি, সইদুল ইসলাম, পি রাজা রাওয়ের মতো কয়েক জন জানান, এলাকায় কোনও ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা না থাকায় প্রকল্পটি ঘোষণার সময়ে তাঁরা আশান্বিত হয়েছিল। ভেবেছিলেন, ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করাবেন। কিন্তু মাদ্রাসাটি না হওয়ায় ছেলেমেয়েদের অন্যত্র ভর্তি করিয়েছিলেন। আনোয়ার আলি বলেন, “মাদ্রাসাটির খুবই দরকার রয়েছে। আমরা চাই, সরকার দ্রুত উদ্যোগী হোক।” একই মত আরও অনেকের।