লিলুয়া হোম থেকে ফের পালানোর চেষ্টা

বারবার একই ঘটনা। নানা অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে হোম থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন আবাসিকেরা। প্রতিবারই প্রশাসন পরিবর্তনের আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু ছবিটা বদলাচ্ছে না। এ বারও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ‘বন্দি’ জীবন থেকে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করলেন ২৫ জন মহিলা আবাসিক। ঘটনাস্থল লিলুয়া হোম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৫
Share:

বারবার একই ঘটনা। নানা অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে হোম থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন আবাসিকেরা। প্রতিবারই প্রশাসন পরিবর্তনের আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু ছবিটা বদলাচ্ছে না। এ বারও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ‘বন্দি’ জীবন থেকে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করলেন ২৫ জন মহিলা আবাসিক।

Advertisement

ঘটনাস্থল লিলুয়া হোম।

কয়েক মাস আগেই দু’-দু’বার এই হোমের পাঁচিল টপকেই পালিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন মহিলা। পরে অবশ্য তাঁদের প্রত্যেককেই উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। লিলুয়া হোম পরিদর্শন করেন রাজ্যের নারী ও শিশু-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। হোমের পরিকাঠামোর উন্নয়নে আশ্বাসও দেন মন্ত্রী। কিন্তু বদলায়নি লিলুয়া হোমের চিত্র।

Advertisement

হোম-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকালে ১৩ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন ২৫ জন আবাসিক। তাঁদের পাঁচ জন বাইরে একটি পরিত্যক্ত কারখানায় ঢুকে গেলে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। বাংলাদেশি ওই আবাসিকদের অভিযোগ, দেশে ফেরানোর নির্দেশ হয়ে গেলেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা বেরিয়ে পড়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মন্ত্রীর নির্দেশে হোমের অন্যান্য কাজের সঙ্গে ১০ ফুট উঁচু সীমানা-পাঁচিলটি আরও তিন ফুট উঁচু করার কাজ হচ্ছিল। তার জন্যই পাঁচিলের গায়ে বাঁশের মাচা বাঁধা হয়েছিল। পাঁচিলের গায়ে ছিল মই। অভিযোগ, এ দিন সকালে মিস্ত্রিরা কাজে এলে বাংলাদেশি আবাসিকেরা তাঁদের মারধর করে যন্ত্রপাতি কেড়ে নেন। এর পরে বাঁশের মাচা ও মই বেয়ে পাঁচিলে উঠে পড়েন পঁচিশ জন আবাসিক। তবে ওই পাঁচ জন ছাড়া অন্য আবাসিকেরা ১৩ ফুট উঁচু পাঁচিলের উপর থেকে আর নামতে পারেননি। তার আগেই বেলুড় থানার পুলিশ এসে পড়ে।

হোম সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ২৪০ জন আবাসিক সেখানে আছেন। এর মধ্যে ১১৩ জনই বাংলাদেশি। গত জুলাই মাসে যার সংখ্যা ছিল ৫০। তখনই সকলকে এক সঙ্গে আদালতে পাঠিয়ে মুক্তির দাবিতে পাঁচিল টপকে পালিয়েছিলেন ২৩ জন বাংলাদেশি আবাসিক। এঁরা অভিযোগ করেছিলেন, হোমের ভিতরে তাঁদের সঙ্গে আমানবিক আচরণ করা হয়। সেই সময়ে ৩০ জন বাংলাদেশিকে নিজেদের দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক জনকেও ফেরত পাঠানো হয়নি।

হোম সূত্রের খবর, গত রবিবার রাতেও পাঁচ জন আবাসিক পাঁচিল তৈরির মই ব্যবহার করে পালিয়ে ছিলেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরে হোমের ভিতরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার বৈঠকের পরে ফের এ দিন সকাল থেকে কাজ শুরু হতেই গণ্ডগোল শুরু হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “হোমের পাঁচিল তৈরির কাজের জন্য মই ও মাচা লাগানো হয়েছিল। ওখানে আরও নিরাপত্তার দরকার ছিল। হোম-কর্তৃপক্ষ বললে ব্যবস্থা করা যেত।” হোমের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, সুপারের সেখানেই থাকার কথা। কিন্তু তিনি প্রতিদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তাঁর বাড়ি থেকে যাতায়াত করেন। ফলে নিরাপত্তার বিষয়ে একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। হাওড়ার সদর মহকুমাশাসক বাণীব্রত দাস বলেন, “বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে কথা বলে ৩০টি মেয়েকে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু কেন এখনও সে কাজ হয়নি, খোঁজ নিতে জেলা সোশাল ওয়েলফেয়ার অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল।” তিনি জানান, হোমের সুপার কেন প্রতিদিন বাড়ি চলে যান, সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন