শরীরে ‘বিদ্যুৎ’, আতঙ্কে দূরে থাকছেন পরিজনেরা

‘অগ্নিকন্যা’কে চেনে এ রাজ্যের মানুষ। এ বার খোঁজ মিলল ‘বিদ্যুৎবাহিনী’র। বেলুড়ের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের গৃহবধূ আশা চৌধুরীকে স্পর্শ করলেই যে ‘বৈদ্যুতিক শক্’ খেতে হবে, তা বোধহয় কস্মিনকালেও ভাবেননি তাঁর পরিজনেরা। এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডে তাই বেজায় আতঙ্কে তাঁরা। এমনকী আশাদেবীর শরীরে বিদ্যুৎ রয়েছে কি না, তা দেখতে গায়ে ‘টেস্টার’ (বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কি না, তা বোঝার যন্ত্র) ছুঁইয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০১:২৮
Share:

আশা চৌধুরী।

‘অগ্নিকন্যা’কে চেনে এ রাজ্যের মানুষ। এ বার খোঁজ মিলল ‘বিদ্যুৎবাহিনী’র।

Advertisement

বেলুড়ের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের গৃহবধূ আশা চৌধুরীকে স্পর্শ করলেই যে ‘বৈদ্যুতিক শক্’ খেতে হবে, তা বোধহয় কস্মিনকালেও ভাবেননি তাঁর পরিজনেরা। এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডে তাই বেজায় আতঙ্কে তাঁরা। এমনকী আশাদেবীর শরীরে বিদ্যুৎ রয়েছে কি না, তা দেখতে গায়ে ‘টেস্টার’ (বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কি না, তা বোঝার যন্ত্র) ছুঁইয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও।

পালঘাট লেনের বাসিন্দা আশাদেবীও নিজের এই সমস্যা নিয়ে বেজায় চিন্তায়। তাঁর কথায়, “কী হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। ভয়ে ছেলে-মেয়ে কেউ সামনেই আসছে না।” ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। আশাদেবীর তিন বছরের মেয়ে শ্রেয়া তাঁর গায়ে হাত দিতেই বিদ্যুতের শক্ খাওয়ার মতো কেঁপে ওঠেন তিনি। ঝটকা লাগে শ্রেয়ারও। তখন অবশ্য বিষয়টিতে আমল দিতে চাননি আশাদেবী। ভেবেছিলেন, মেয়ে আলপিন জাতীয় কিছু এনে গায়ে ফুটিয়ে দিয়েছে। আচমকা খোঁচা খেয়েই হয়তো এমন মনে হয়েছে। কিন্তু তা যে নয়, কিছুক্ষণ পরেই টের পান তিনি। ছেলে অয়ন এসে হাত ধরতেই ফের দু’জনেরই ঝটকা লাগে। সেই সময়ে বাড়ির বাইরে ছিলেন তাঁর স্বামী সুনীল চৌধুরী। বেজায় ভয় পেয়ে তাঁকে ফোন করেন আশাদেবী।

Advertisement

তড়িঘড়ি বাড়ি চলে আসেন তাঁর স্বামী সুনীলবাবু। দুপুরে খাওয়া শেষে স্টিলের থালা আশাদেবীর হাতে দিতেই ফের দু’জনেরই ঝটকা লাগে। সুনীলবাবু বলেন, “থালাটা হাতে দিতেই আমার স্ত্রী শক্ খাওয়ার মতো কেঁপে উঠল। আমারও একই রকম ভাবে শক্ লাগলো।” ফের রাতে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে স্টিলের রেলিংয়ে হাত দিতেই একই সমস্যা শুরু হয়। আশাদেবী বলেন, “দুপুরের পরে আর সমস্যা না হওয়ায় ভেবেছিলাম মনের ভুল। কিন্তু রাতে রেলিংয়ে হাত দিতেই ফের শক্ লাগলো।” শনিবার সকালেও আলমারির হাতলে হাত দেওয়া মাত্রই একই রকমের সমস্যা হয়েছে বলেই জানান ওই গৃহবধূ।

বারংবার এই ঘটনা ঘটতে থাকায় ভয়ে মায়ের কাছে যেতে চাইছে না শ্রেয়া ও অয়ন। বাড়ির পরিচারকেরাও ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন। চিন্তায় পড়ে শেষে এক নিকটাত্মীয় তথা পারিবারিক চিকিৎসককে ফোন করে বিষয়টি জানান সুনীলবাবু। তিনিই সুনীলবাবুকে জানান, আশাদেবীর স্নায়ু সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয়েছে।

তবে স্নায়ু চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। ছোট ছোট স্নায়ু কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানব শরীরে এমন বৈদ্যুতিক শক্ লাগার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, ‘পিওর সেন্সারি নিউরোপ্যাথি বা স্মল ফাইভার নিউরোপ্যাথি’। ঘটনাটি শুনে স্নায়ু চিকিৎসক তৃষিত রায় বলেন, “এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। মাঝেমধ্যে এমন রোগে আক্রান্ত লোকজন আসেন। ছোট ছোট যে সমস্ত স্নায়ু ব্যথা, স্পর্শ, তাপ এই অনুভূতিগুলি বহন করে সেগুলি কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে এই সমস্যা তৈরি হয়। এটি ‘ইমিউন মিডিয়েটেড ডিজিজ’। তবে রোগীকে ভাল ভাবে না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।” তৃষিতবাবু আরও জানান, যিনি এই সমস্যায় আক্রান্ত তাঁকে স্পর্শ করলে অন্যের বিদ্যুতের শক্ খাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, “এটা আতঙ্ক থেকে মনের ভুল মাত্র।”

কথায় আছে ‘‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ।’’ কিন্তু স্ত্রী বা মাকে ছুঁতে গেলে ভাগ্যে যে ‘শক্’ জুটবে, এমন ঘটনা না ঘটলে তা বোধহয় ভাবতেও পারত না পালঘাট লেনের চৌধুরী পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন