ছবি: তাপস ঘোষ।
পঞ্চমীতেই আভাস মিলেছিল। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় হুগলির মণ্ডপমুখী দর্শনার্থীদের দখলে চলে গেল পথ। গত কয়েক দিন বেশ গরমের পর মঙ্গলবার দুপুরে কোথাও কোথাও দু’-এক পশলা বৃষ্টি নামে। তাতে গুমোট ভাব অনেকটা কেটে যাওয়ার আনন্দে পথে নেমে পড়ে জনতা। জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে কোন্নগর বা উত্তরপাড়া অথবা বলাগড় সর্বত্রই এক ছবি। ঠাকুর দেখার সঙ্গে চলেছে তাল মিলিয়ে ফুচকা, ঝালমুড়ি আর রেস্তোরাঁর সঙ্গে সঙ্গত।
চুঁচুড়া শহরে ঢোকার মুখে খাদিনামোড় পার্কের ঝলমলে আলোকসজ্জা মন ভরে দেখছেন মানুষ। কামারপাড়া পঞ্চাননতলা সর্বজনীনের পুজোয় গাছে মৌচাক। মণ্ডপে মৌমাছির গুঞ্জন। মতিবাগান সর্বজনীনে উঠে এসেছে শিশুশ্রমিকদের জীবন। আখনবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপ রাজস্থানের জয়পুরের হাভেলি। তার মধ্যে সাবেকি বেশে দুর্গা। উত্তরপাড়া স্টেশন লাগোয়া সিএ মাঠে নিউ কলোনি সর্বজনীনের পুজোমণ্ডপ ছিল ভিড়ে ঠাসা। মণ্ডপে চট দিয়ে তৈরি সুদৃশ্য মডেল এবং আলোকসজ্জা চোখ টানে। কাছেই উত্তরপাড়া আবাহনের পুজোতেও ভালই ভিড়। এ বার রজত জয়ন্তী বর্ষ। জয়কৃষ্ণ স্ট্রিটে আপনাদের দুর্গাপুজোর বা ইয়ং স্টারের প্রতিমা দেখার মতো। নর্থ কমপ্লেক্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির (ভার্মা ফ্ল্যাট) উদ্যোক্তারাও পুজোর আয়োজনে কোনও ফাঁক রাখেননি। লোক টানার নিরিখে ভদ্রকালী ইউথ কোর এ দিন প্রথম সারিতেই। মাটির থালা, বাটি, ঘটি, প্রদীপ দিয়ে তৈরি তাদের মণ্ডপ সুন্দর। মালিকপাড়া অ্যাসোসিয়েশনের পুজো ছিমছাম। সেখানেও ভালই ভিড়। হিন্দমোটর অগ্রণী সঙ্ঘ তাদের মণ্ডপ তৈরি করেছে ওড়িশার মন্দিরের আদলে। পুজো আয়োজনে মহিলারাও যে পিছিয়ে নেই তার প্রমাণ শ্রীরামপুর হাউজিং এস্টেটের পুজো। আরামবাগের পল্লিশ্রী নাগরিক সমিতির পুজোর থিম ‘মহিলাদের ভোটাধিকার’। এখানেও মহিলারাই সর্বেসর্বা। শ্রীরামপুরের চাতরা গুডবাই ক্লাবের থিম দশ মহাবিদ্যা। মেদিনীপুরের শিল্পীরা ঝুড়ি দিয়ে গোটা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। চাতরা শীতলাতলার প্রতিমার শোলার সাজ।শীতলাতলা (গাবতলা)-র প্রতিমা নজরকাড়া।
পুজোয় সকলকে সামিল করতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। তারই সূত্রে ধরে সোমবার ডানকুনি থানার পুলিশকর্মীরা নিজেদের বেতনের টাকায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পোশাক দিয়েছেন। প্রকাশিত হয়েছে পুজোর গাইড ম্যাপ। বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী স্বামী নিত্যসেবানন্দ এবং পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও থিমের রমরমা। প্রকৃতিগত কারণে পাখির অবলুপ্তি গুপ্তিপাড়ার ইউনাইটেড ক্লাবের থিম। দাসপাড়া যুবক সঙ্ঘের মণ্ডপ মায়াপুরে ইস্কনের নতুন মন্দিরের আদলে। সারদানগর ইয়ং স্টারের আকর্ষণ লছমনঝোলা। স্বরলিপি দক্ষিণ ভারতের জৈন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। আজাদ হিন্দ ক্লাবে তুলে ধরা হয়েছে লালন ফকিরের জীবনী। সারদানগর ভুমিজপাড়া, নির্ভীক সঙ্ঘেরও থিমের পুজো। বৈদিকপাড়া বারোয়ারিতে পুজোয় ঘরোয়া পরিবেশ। চণ্ডীতলার মশাট বিশ্বেশ্বরবান্ধব সমাজ, জাঙ্গিপাড়া বাজার, সিংটি সর্বজনীনের পুজোয় ঘরোয়া পরিবেশ। পুড়শুড়ার দেউলপাড়া এবং দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন দু’টি পুজোরই এ বার পঞ্চাশ বছর। ঘোলদিঘরুই সর্বজনীনের পুজো সুন্দর। সব জায়গাতেই ষষ্ঠীর সন্ধে থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড়।
সব মিলিয়ে নবমী নিশি পর্যন্ত ভিড়ের চেহারা কেমন হবে, তার মালুম পাওয়া গেল এ দিনই।