ষষ্ঠীর রাতেই হার অন্ধকারের, আলোয় ভাসল চন্দননগর

ভিড় শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। সন্ধ্যায় তা আকার নিল জনপ্লাবনের ষষ্ঠীর রাতেই অন্ধকার পুরোপুরি উবে গিয়ে আলোর স্রোতে ভেসে গেল চন্দননগর। শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা কত না আলোর গেট! কোথাও আলোয় দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি তো কোথাও রবীন্দ্রনাথ! কোথাও গঙ্গা নামছে শিবের জটা থেকে, আবার কোথাও শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম হাতে দাঁড়িয়ে নারায়ণ!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৪
Share:

উদ্বোধন হল পুজোর গাইড ম্যাপের। ছবি: তাপস ঘোষ।

ভিড় শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। সন্ধ্যায় তা আকার নিল জনপ্লাবনের

Advertisement

ষষ্ঠীর রাতেই অন্ধকার পুরোপুরি উবে গিয়ে আলোর স্রোতে ভেসে গেল চন্দননগর। শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা কত না আলোর গেট! কোথাও আলোয় দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি তো কোথাও রবীন্দ্রনাথ! কোথাও গঙ্গা নামছে শিবের জটা থেকে, আবার কোথাও শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম হাতে দাঁড়িয়ে নারায়ণ!

বেশির ভাগ বারোয়ারিতেই মঙ্গলবার, পঞ্চমীর রাত পর্যন্ত মণ্ডপ ও প্রতিমা সাজানোর কাজ চলেছে। ষষ্ঠীর সকাল থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায়। এ দিন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুজোর ‘গাইড ম্যাপ’ প্রকাশ করেন হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) জয়িতা বসু, চন্দননগরের বিধায়ক অশোক সাউ, মেয়র রাম চক্রবর্তী প্রমুখ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দর্শনার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছে যায় ওই গাইড ম্যাপ।

Advertisement

‘চন্দননগরের পুজো’ দেখা কেউ শুরু করেন ভদ্রেশ্বরের দিক থেকে। কেউ বা চন্দননগর স্টেশন হয়ে। যথারীতি এ বারও ভিড় এগিয়েছে ওই দুই পথ ধরেই। সন্ধ্যা থেকেই রাস্তায় বাস অদৃশ্য। তবে, টোটো-অটোয় সওয়ারি হয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছেন দর্শক। মুখ চালাতে রাস্তার ধারে বসেছে ফুচকা, ঘুগনি, চাউমিন, এগরোলের হাজারো স্টল।

গত বেশ কয়েক বছরেই চন্দননগরের আলোর এক সময়ের প্রধান উপকরণ টুনি কার্যত বিদায় নিয়েছে। তার জায়গা নিয়েছে এলইডি। আলোর যত কিছু কারিকুরি এখন সেই এলইডি-তেই। তবে, পুরনো দিনের সেই টুনির নরম আলোর স্মৃতি এ বার উস্কে দিতে পারে ফটকগোড়া সর্বজনীন। চড়কতলা তেমাথায় আলোর খেলায় শিশুদের কথা মাথায় রেখেই ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার’ থেকে আরও কত কী! শিশুরা তো বটেই, চমকাচ্ছেন বড়রাও। তালপুকুর ধার সর্বজনীনের আলোকে অন্য মাত্রা দিয়েছে সামনের পুকুরে তার প্রতিচ্ছবি। দর্শকদের দাঁড়াতেই হচ্ছে তালপুকুর ধার দিনেমারডাঙার মণ্ডপের থিম ‘গণেশের বিশ্ব ভ্রমণ’ দেখতে। আলোতেও এ বার তারা তুলে ধরেছে গণেশকেই।

প্রথম বার এ শহরে পুজো দেখতে এসে আলো দেখে কেউ চমকেছেন, কেউ আবার দাবি করেছেন, ‘এ সব আগেও দেখেছেন’। শহরের আলোকশিল্পীদের একাংশও মানছেন, এলইডি-তে বেশি চমক দেখানো যায় না। যেমন, বাবু পাল প্রায় ২৩ বছর ধরে আলোকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এই শিল্পীর আলো এ বার দেখা যাচ্ছে ফটকগোড়া এবং চড়কতলা তেমাথায়। তাঁর কথায়, “এলইডি-র আলো তীব্র। কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে অনেকেই তা সহজে বানিয়ে নিচ্ছেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় বলে পুজো কমিটিগুলোও সে দিকেই ঝুঁকছে। কিন্তু এলইডি দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ তেমন করা যাচ্ছে না।”

আর এক আলোকশিল্পী পিন্টু মুখোপাধ্যায় আলোয় সাজিয়েছেন কলুপুকর সর্বজনীনকে। এখানে আলোয় মাথা নাড়ছে জিরাফ। বসেছে মেলা। উঠছে ফোয়ারা। শোভাযাত্রার আলোয় থাকবে পাখিজগৎ। ভদ্রেশ্বর তেলেনিপাড়া কালীতলার পুজোর এ বার হীরকজয়ন্তী বর্ষ। পিন্টুবাবু অবশ্য দাবি করছেন, এলইডি-তেও চমক আনা যায়। তিনি বলেন, ‘‘শোভাযাত্রার আলো দেখলেই বোঝা যাবে কত রকমারি আলোর খেলা রয়েছে।’’

তবে, শোভাযাত্রা নয়, দর্শনার্থীরা আপাতত মশগুল সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী নিয়ে। সবে তো শুরু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন