ভক্তদের ভিড়ে তারকেশ্বর স্টেশন। ছবি: দীপঙ্কর দে।
গোটা শ্রাবণ মাস শুধু ট্রেনগুলিই নয়, হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার বহু স্টেশনই কার্যত চলে যায় শিবভক্তদের দখলে।
হাওড়া মেন শাখার শেওড়াফুলি স্টেশন ছুঁয়েই তারকেশ্বর লোকালের যাতায়াত। হাওড়া স্টেশন থেকেই তারকেশ্বরমুখী জলযাত্রীদের জন্য পসরা নিয়ে বসে পড়ে দোকানিরা। প্লাস্টিকের ঘট, ফুল, পোশাক, বাঁক, গামছা, তোয়ালে, বাঁক সাজানোর উপকরণ কী থাকে না সেখানে? সঙ্গে থাকে নানারকমের নেশার জিনিসও। বলাবাহুল্য সব বেচাকেনাই চলে কার্যত রেল পুলিশের নাকের ডগায়।
তবে শুধু এই মাসেই নয়, বছরভরই এ সব ব্যবসা চালায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। কারণ এখন কমবেশি সারা বছরই তারকেশ্বরে ভক্তদের জল ঢালতে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাই পুজোর নানা উপকরণের চাহিদাও থাকে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা এমনকী ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও নেমে পড়ে এই ব্যবসায়। কিন্তু বসার জায়গা? সে ব্যবস্থাও তৈরি। পুলিশের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ায় সাবওয়ে, হাওড়া স্টেশনমুখো নানা চত্বর জুড়েই ওদের দাপট। পরিণামে কলকাতায় যাওয়া ও হাওড়ায় ফেরার পথে চরম ভোগান্তি যাত্রী থেকে নিত্যযাত্রীদের। স্টেশন চত্বরে ছড়িয়ে থাকা কর্মরত জিআরপি, আরপিএফ সকলেই আছেন। তবে তাঁদের ভূমিকা নীরব দর্শক। তারই মাঝে কখনও কখনও রেল পুলিশের বড়কর্তাদের স্টেশনে চত্বের আসার খবর থাকলে একটর নড়েচড়ে বসা। ব্যবসায়ীরাও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে রেল পুলিশের সঙ্গে এমন লুকোচুরি খেলায়।
শুধু হাওড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনই নয়, মেন শাখার বহু স্টেশনেই গোটা শ্রাবণ মাসভর দেখা মিলবে এমন দৃশ্যের। আর তারকেশ্বর স্টেশন? এই একটা মাস এটা রেলের নয়। স্টেশনের দখল অলিখিতভাবেই চলে যায় ভক্তদের জিম্মায়। সেখানে নিত্যযাত্ররা নিতান্তই অনুকম্পার পাত্র। স্টেশন জুড়ে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে নিত্যযাত্রীদের প্রাণ যায়। স্টেশনের উপর শেওড়াফুলি জিআরপি থানা অবশ্য রয়েছে। কিন্তু তার যাবতীয় ভূমিকা শেষ হয় আষাঢ় মাসের শেষ তারিখে। ফের তা শুরু হয় ভাদ্র মাসের প্রথম দিন থেকে। নিত্যযাত্রীদের কেউ ‘সাহস’ দেখিয়ে কিছু বললেও উত্তর আসে, “মানুষের ধর্মীয় আবেগ রয়েছে। তা ছাড়া ওঁরা খুব সমস্যা না করলে পুলিশ মাথা গলায় না।”
তবে এ হেন মাথা না গলানোর অঘোষিত পদক্ষেপ নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক বছর আগে পরিস্থিতি এমন হয় যে নিমাইতীর্থ ঘাটে গঙ্গার জল নিতে গিয়ে মহিলারদেরই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল। বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈদ্যবাটি পুরসভার পক্ষ থেকে নিমাইতীর্থ ঘাটে ক্লোজ সার্কিট টিভি বসানো হয়। বাড়ানো হয় মহিলা পুলিশের সংখ্যা। দেওয়া হয় সিভিক স্বেচ্ছাসেবক। দুর্ঘটনা ড়োতে নদীবক্ষে টহলদারি বাড়ানো হয়।
বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “নিমাইতীর্থ ঘাটে মহিলাদের সুরক্ষায় অনেক ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, ভিড়ের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির উন্মত্ত ভক্ত সব সময়ই বাড়াবাড়ির চেষ্টা করে থাকে। তবে সে জন্য পুলিশ রয়েছে। রয়েছেন সচেতন ভক্তেরাও।”