চার বছরেও পাকা রাস্তা হয়নি, টাকা-জমি পড়ে পাঁচলায়

স্থানাভাবে ভর্তি বন্ধ কেন্দ্রীয় স্কুলে

চার বছরেও পাকা হল না এক কিলোমিটার রাস্তা। এর ফলে পাঁচলার গঙ্গাধরপুরে জওহর নবোদয় স্কুলের ভবন নির্মাণ তো হলই না, আগামী বছর ভর্তিও বন্ধ করে দেওয়া হল। এমনকী, এ বছরে যাদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে, তাদের পঠনপাঠন শুরু না হওয়ায় চিন্তায় অভিভাবকেরা। অথচ, কেন্দ্রীয় ওই স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য জুজারসাহা-ধুলাগড় সড়কের কাছেই জমি রয়েছে। তহবিলে রয়েছে ৪০ কোটি টাকা। জমি পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তা পিচের বা কংক্রিটের হলে ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং যন্ত্রপাতি আনা যাবে। কিন্তু সেটাই এখনও হয়ে ওঠেনি।

Advertisement

নুরুল আবসার

পাঁচলা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

স্কুল ভবনের জমি পড়ে রয়েছে।

চার বছরেও পাকা হল না এক কিলোমিটার রাস্তা। এর ফলে পাঁচলার গঙ্গাধরপুরে জওহর নবোদয় স্কুলের ভবন নির্মাণ তো হলই না, আগামী বছর ভর্তিও বন্ধ করে দেওয়া হল। এমনকী, এ বছরে যাদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে, তাদের পঠনপাঠন শুরু না হওয়ায় চিন্তায় অভিভাবকেরা।

Advertisement

অথচ, কেন্দ্রীয় ওই স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য জুজারসাহা-ধুলাগড় সড়কের কাছেই জমি রয়েছে। তহবিলে রয়েছে ৪০ কোটি টাকা। জমি পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তা পিচের বা কংক্রিটের হলে ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং যন্ত্রপাতি আনা যাবে। কিন্তু সেটাই এখনও হয়ে ওঠেনি।

বর্তমানে এই স্কুলটি চলছে একটি কলেজের ছাত্রাবাসে। সেই বাড়িতে স্থানাভাব হওয়ার জন্যই ভর্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা বসবে কোথায়? কলেজের ছাত্রাবাসেও জায়গা নেই। সেই কারণে ভর্তি না করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাস্তাটি দ্রুত তৈরির চেষ্টা চলছে।” তবে, জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, ওই রাস্তাটি পিচ বা কংক্রিট দিয়ে তৈরি করতে হলে ৩০ লক্ষ টাকা দরকার। কিন্তু প্রশাসনের তহবিলে অত টাকা নেই। কোনও প্রকল্পের পরিকল্পনাও কোনও পক্ষ তাঁদের কাছে জমা দেননি।

Advertisement

এই জন্য জেলা প্রশাসনকেই দুষছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, রাস্তাটি সংস্কার করতে হবে জেলা প্রশাসনকেই। মাস তিনেক আগে জেলা প্রশাসন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ওই রাস্তায় প্রায় এক লক্ষ টাকার মাটি ফেলার কাজ করায়। কিন্তু কাজটি বর্ষার সময়ে হওয়ায় তা থেকে কিছু লাভ হয়নি এবং নতুন ভাবে সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। তাঁদের মতে, কয়েকটি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিকে নিয়ে প্রকল্প তৈরি করে রাস্তাটি নির্মাণ করা যেত। কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে অধ্যক্ষ বিজয়া নায়েক কথা বলতে রাজি হননি।


এই সেই কলেজের ছাত্রাবাস যেখানে আপাতত স্কুলটি চলে।

নবোদয় স্কুল চালায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতর। স্কুলগুলি আবাসিক। জেলায় এই স্কুল খোলার চেষ্টা শুরু হয় নব্বুইয়ের দশকের মাঝামাঝি। এই ধরনের স্কুল গড়ার জন্য জমির ব্যবস্থা করতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে। ভবন তৈরি করা, ছাত্রছাত্রীদের থাকা-খাওয়ার জন্য এবং শিক্ষকদের বেতন বাবদ টাকা খরচ করে কেন্দ্র সরকার। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। এখানে পড়ার সুযোগ পায় জেলার মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।

এর মধ্যে অনেক চেষ্টা করেও স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য হাওড়া জেলা প্রশাসন এক লপ্তে ১৫ একর জমি সংগ্রহ করে উঠতে পারেনি। ২০০৬ সালে বাগনানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভবনে শুরু হয় পঠন-পাঠন। সেই ভবন সংস্কারে জেলা পরিষদ অন্তত ২২ লক্ষ টাকা খরচ করে। কিন্তু ছাত্রছাত্রী বাড়ায় সেখানে স্থানাভাব হয়। ২০০৯ সালে সাঁকরাইলে একটি খাসজমি নির্বাচন করা হলেও পরবর্তী সময়ে জমিটিকে কেন্দ্র করে মামলা-মোকদ্দমা শুরু হয়ে যাওয়ায় সেটি আর পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাধরপুরের প্রাক্তন শিক্ষক সন্তোষ দাস ২০১১ সালে স্কুল ভবন তৈরির জন্য ২৪ বিঘা এবং রাস্তা তৈরির জন্য তিন বিঘা দান করেন। জেলা পরিষদ দেয় ছয় বিঘা জমি। সন্তোষবাবুর উদ্যোগেই ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে বিএড কলেজ-সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভবন তৈরি না হওয়ায় ওই কলেজের ছাত্রাবাসেই বাগনান থেকে স্কুলটিকে সরিয়ে নিয়ে এসে চার বছর আগে পঠন-পাঠন চালুর ব্যবস্থা করেন সন্তোষবাবু। বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৮৭। কিন্তু এখনও ভবন তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভ গোপন করেননি সন্তোষবাবু। তিনি বলেন, “কথা ছিল জমি পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে স্কুলবাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু এখন যা অবস্থা কলেজের ছাত্রদেরই ছাত্রাবাস ব্যবহার করতে দিতে পারছি না। রাস্তা তৈরিতে কারও উদ্যোগ নেই।” স্কুলের জন্য জেলা পরিষদ যে ভাবে বাগনানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভবন করে দিয়েছিল, সে ভাবে এই কলেজের ছাত্রাবাসটিও সংস্কার করা হলে সমস্যা কিছুটা মিটবে বলে মনে করছেন সন্তোষবাবু। জেলা সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “ওই ধরনের কোনও দাবির কথা জানি না।’’

চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যে সব ছাত্রছাত্রী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল স্থানাভাবের কারণে তাদের এখনও পঠন-পাঠন শুরুই হয়নি। জুলাই মাসেই তা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কিন্তু অভিভাবকদের অনেকেই মনে করছেন, শুধুমাত্র স্কুল ভবন তৈরির ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য জেলার মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা বিনা খরচে উন্নত মানের পঠনপাঠন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে।

ছবিগুলি তুলেছেন সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন