সহজে বীজ পেতে বর্ষাতেও বাদাম চাষ আরামবাগে

বীজের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও গত বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে আরামবাগ মহকুমায়। এ বার বীজের সমস্যা মেটাতে বর্ষাতেও শুরু হল ওই চাষ। গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিল। এ বছর এক লাফে মহকুমায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন বাদাম চাষ হয়েছে। চাষিদের আশা, সহজে বীজ মিললে পরের গ্রীষ্মে চাষের এলাকা আরও বাড়বে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৯
Share:

বীজের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও গত বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে আরামবাগ মহকুমায়। এ বার বীজের সমস্যা মেটাতে বর্ষাতেও শুরু হল ওই চাষ। গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিল। এ বছর এক লাফে মহকুমায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন বাদাম চাষ হয়েছে। চাষিদের আশা, সহজে বীজ মিললে পরের গ্রীষ্মে চাষের এলাকা আরও বাড়বে।

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদামের বয়স ছ’মাস হয়ে গেলেই অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, চাষিরা এক গ্রীষ্মে চাষ করার পরে উত্‌‌পাদিত ফসল বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন না। ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বাজার থেকে তাঁদের বীজ কিনতে হত। ফলে, অনেকেই গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষে আগ্রহী হলেও বীজ কেনার ক্ষমতা না থাকায় চাষ করতেন না। তাই তিন বছর ধরে গ্রীষ্মের পরে বর্ষাতেও মহকুমায় ফের বাদাম চাষের জন্য চাষিদের উত্‌সাহিত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল। সেই চেষ্টা এ বার অনেকটা সফল হয়েছে বলে ওই দফতরের কর্তাদের দাবি। বর্ষায় বাদাম চাষ শুরু হয়েছে জুলাই মাসে। নভেম্বর মাসের গোড়ায় বাদাম ওঠার সময়।

মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “অর্থকরী ফসল হিসাবে বাদাম ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে মহকুমায়। বর্ষাতেও সেই চাষ করে এক দিকে যেমন ধানের চেয়ে বেশি লাভ পাবেন চাষিরা, তেমনই গ্রীষ্মকালীন চাষে বীজের ঘাটতি মেটাতে পারেন। নিশ্চিত ভাবেই গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষ বাড়বে।”

Advertisement

মহকুমা কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছর আগে মহকুমায় গ্রীষ্মকালীন বাদাম চাষ হত প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন চাষের এলাকা ১০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই পরিমাণ জমিতে চাষের জন্য বীজের প্রয়োজন হয় প্রায় ১২০০ টন। বর্ষাকালীন ২৫০ হেক্টর চাষের ফলে প্রায় ৫০০ টন বীজের নিশ্চয়তা থাকছে। বাকিটা বাইরে থেকে কিনতে হবে চাষিদের। বীজের ঘাটতি মেটাতে বর্ষাকালীন চাষের এলাকা যাতে আরও বাড়ানো যায় সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। ফসল উঠতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। বিঘাপিছু গড়ে সাড়ে তিন কুইন্টাল বাদাম মেলে। কিলোপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দাম পাওয়া যায়। আলু চাষের পর সেই জমিতেই বাদামের বীজ বপন করা হয়। সাধারণত ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত পুড়শুড়া, খানাকুল-১ ও ২, আরামবাগ এবং গোঘাটের দু’টি ব্লকের চাষিরা বীজ বপনের কাজ করেন। বর্ষাকালীন বাদামের জন্য বিভিন্ন নদীর ধারে বেলে মাটিতে চাষ করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দফতর।

গত বছর খানাকুলের বালিপুর অঞ্চলের দু’একটি জায়গায় বর্ষাকালীন বাদাম চাষ সীমাবদ্ধ থাকলেও এ বছর খানাকুলেরই তাঁতিশাল, অরুন্ডা, আরামবাগের আরান্ডি, সালেপুর, মানিকপাট এবং পুড়শুড়া এবং গোঘাটের কিছু জায়গায় ওই চাষ শুরু হয়েছে।

কী বলছেন চাষিরা?

গত বছর থেকে বর্ষাকালীন বাদাম চাষ করেছিলেন বালিপুরের গুরুদাস মণ্ডল। তাঁর কথায়, “গত বর্ষায় এক বিঘা জমিতে চাষ করে এ বার গ্রীষ্মের চাষে তিন বিঘা জমির বীজ কিনতেই হল না। বীজ হিসাবে বিক্রি করেও ভাল লাভ পেয়েছি।”

মানিকপাটের চাষি গৌতম পাল বলেন, “এ বার বর্ষায় প্রায় দেড় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। মনে হচ্ছে পরের গ্রীষ্মের চাষে আর বাইরে থেকে বীজ কিনতে হবে না।” একই সুরে সালেপুরের চিত্তরঞ্জন সামন্তও বলেন, “বাদাম বীজ হিসেবে বিক্রি করে ভাল লাভ মেলে। তাই এ বার বর্ষাতেও চাষ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন