হাওড়ায় পুড়ে ছাই লাইসেন্সবিহীন কারখানা

গঙ্গার কাছেই প্রায় তিনশো কাঠা জমি। গোটা জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দাহ্য বস্তুতে ঠাসা কারখানা ও গুদাম। অভিযোগ, হাওড়া কমিশনারেট অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেআইনি ভাবে গড়ে ওঠা ওই সব কারখানা, গুদামের অধিকাংশের যেমন কোনও ট্রেড লাইসেন্স নেই, নেই ফায়ার লাইসেন্সও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০২
Share:

লেলিহান শিখার গ্রাসে সেই কারখানা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র

গঙ্গার কাছেই প্রায় তিনশো কাঠা জমি। গোটা জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দাহ্য বস্তুতে ঠাসা কারখানা ও গুদাম। অভিযোগ, হাওড়া কমিশনারেট অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেআইনি ভাবে গড়ে ওঠা ওই সব কারখানা, গুদামের অধিকাংশের যেমন কোনও ট্রেড লাইসেন্স নেই, নেই ফায়ার লাইসেন্সও। বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই একটি সুতো তৈরির কারখানায় বিধ্বংসী আগুন লাগে। কারখানায় প্রচুর পাট ও তেল মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়ায়। প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় দমকলের ৮টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও কারখানাটির অধিকাংশই পুড়ে গিয়েছে। তবে কোনও হতাহতের খবর নেই।

Advertisement

দমকল সূত্রে খবর, হাওড়া তেলকল ঘাটের কাছে গ্র্যান্ড ফোরশোর রোড সংলগ্ন নিত্যধন মুখার্জি রোডে ওই কারখানায় দুপুর দু’টো নাগাদ আগুন লাগে। প্রায় ১৮ কাঠা জমির উপরে গড়ে ওঠা কারখানায় তখন টিফিন চলছিল। কারখানার ম্যানেজার লক্ষ্মীকান্ত মাইতি জানান, টিফিন চলায় সমস্ত কাজ বন্ধ ছিল। আগুনের ফুলকি প্রথম দেখতে পাওয়া যায় কারখানার পিছনের দিকে পাট মজুত রাখার জায়গায়। তিনি বলেন, “আমরাই কারখানার দু’টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে দমকলে খবর দেওয়া হয়।”

খবর পেয়ে প্রথমে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আসে। কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়ানোয় আরও ছ’টি ইঞ্জিন পৌঁছয়। জল শেষ হয়ে যাওয়ায় পাশে গঙ্গা থেকেও জল নেওয়া হয়। কারখানার ভিতরে প্রচুর তেলের ড্রাম থাকলেও তা সময় মতো বার করে দেওয়ায় আগুন ভয়াবহ আকার নেয়নি। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা ধোঁয়ায় ভর্তি। আশপাশে ঘনবসতি ও কারখানা থাকায় উত্তেজনায় লোকজন রাস্তায় চলে এসেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপস্থিত হয়েছেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রাই-সহ সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা।

Advertisement

দমকলের হাওড়ার ডিভিশনাল অফিসার সমীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগুন ঠিক কী থেকে লেগেছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে কারখানায় প্রচুর পাট ও তেল মজুত ছিল। দমকলের অনুমতি না নিয়ে বেআইনি ভাবেই তা চলছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।”

হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, যে কারখানায় এ দিন আগুন লাগে তার আশপাশের প্রায় তিনশো কাঠা জমির মালিকের সঙ্গে এক প্রোমোটারের দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চলছে। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট ওই জমিতে থাকা বিভিন্ন কারখানা ও গুদামকে জবরদখলকারী ঘোষণা করার পরেই পুরসভা ওই কারখানা, গুদামগুলির ট্রেড লাইসেন্স পুর্ননবিকরণ বন্ধ করে। এর পরেও অবশ্য কারখানাগুলি নিম্ন আদালতে স্থিতাবস্থার অনুমতি নিয়ে অবাধে চলছিল।

হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “কারখানাগুলি ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কী ভাবে চলছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরসভার অফিসারদের বলেছি এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।”

হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “আদালতের কোনও নির্দেশ আমাদের হাতে এলেই ওই সব অবৈধ কারখানা অবিলম্বে বন্ধ করে দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন