হিমঘরে আলু রাখা নিয়ে অবরোধ, ভাঙচুর

হিমঘরে আলু রাখাকে কেন্দ্র করে গোলমাল অব্যাহত হুগলিতে। আলুচাষিদের পথ অবরোধ, হিমঘরের ম্যানেজারকে তালাবন্দি করে রাখা, ভাঙচুর বুধবার বাদ গেল না কিছুই। পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হল পুলিশকে। ন্যায্যমূল্যে রাজ্য সরকারকে আলু কিনতে হবে, এই দাবিতে বিরোধী দলগুলিও আন্দোলন শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাণ্ডুয়া ও গোঘাট শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৮
Share:

হিমঘরে ঠাঁই নেই। বৈঁচিতে মাঠেই পড়ে আলু। (বাঁ দিকে)। গোঘাটের হিমঘরে বিক্ষোভ। (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

হিমঘরে আলু রাখাকে কেন্দ্র করে গোলমাল অব্যাহত হুগলিতে।

Advertisement

আলুচাষিদের পথ অবরোধ, হিমঘরের ম্যানেজারকে তালাবন্দি করে রাখা, ভাঙচুর বুধবার বাদ গেল না কিছুই। পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হল পুলিশকে। ন্যায্যমূল্যে রাজ্য সরকারকে আলু কিনতে হবে, এই দাবিতে বিরোধী দলগুলিও আন্দোলন শুরু করেছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে ২৭০ লক্ষ হেক্টর জমিতে এ বার ১ লক্ষ ২০ হাজার টন আলু হয়েছে। জেলায় প্রায় ১৫০টি হিমঘর রয়েছে। সমস্ত আলু হিমঘরে রাখা সম্ভব নয় বলে হিমঘর মালিকদের বক্তব্য। অতিরিক্ত ফলন এবং দাম না পাওয়ায় মঙ্গলবারই খানাকুলের এক আলুচাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। রাজ্যের অন্যতম আলু উত্‌পাদক এই জেলায় মাঠের আলুর দাম নিয়ে চাষিদের ক্ষোভ রয়েছে প্রায় সর্বত্রই। জেলার হিমঘরগুলি ইতিমধ্যেই প্রায় ভরে উঠেছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে বৈঁচির জি টি রোডের ধারে ‘সিএডিপিএফএসসিএস কোল্ড স্টোরেজ’ নামে একটি হিমঘরে আলু রাখার জন্য মঙ্গলবার রাত থেকে শ’খানেক চাষি লাইন দেন। বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ হিমঘর কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, আলু আর রাখা যাবে না। এর পরেই চাষিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শুরু হয় অবরোধ। এক সময়ে হিমঘরের ম্যানেজার শ্বাশ্বত সিংহরায়ের ঘরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা।

চাষিদের অভিযোগ, হিমঘরে জায়গা ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও আলু নেওয়া হচ্ছে না। হিমঘরের কর্তারা চাষিদের জানান, রাজ্য সরকার ১০% জায়গা সংরক্ষণ করে রেখেছে। ওইটুকু জায়গাই ফাঁকা রয়েছে। সেই কারণে নতুন করে আর কোনও আলু রাখার পরিস্থিতি নেই। চাষিরা অবশ্য সে কথা শুনতে চাননি। বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। চাষিদের দাবি, হিমঘর কর্তৃপক্ষ আলু নেওয়ার আশ্বাস দেওয়াতেই তাঁরা অবরোধ তোলেন। কিন্তু পুলিশ চলে যেতেই হিমঘর কর্তৃপক্ষ জানান, আলু কোনও অবস্থাতেই রাখা যাবে না। এর পরেই দুপুর আড়াইটে নাগাদ শাশ্বতবাবুকে আটক করা হয়। ঘণ্টা দেড়েক পরে পুলিশ এসে তালা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ইউসুফ মণ্ডল, শেখ রিয়াজউদ্দিন বলেন, “হিমঘরে আলু রাখতে না পারলে আমরা মাঠে মারা পড়ব। প্রতিবারেই তো এই হিমঘরে আমরা আলু রাখি। আগে থেকে কিছু না জানিয়ে হঠাত্‌ করেই বলা হল আলু নেওয়া হবে না। এখন আমরা কোথায় যাব!”

শাশ্বতবাবু বলেন, “আমাদের কিছু করার নেই। হিমঘর ভরে গিয়েছে। শুধুমাত্র সরকার যে টুকু জায়গা রাখতে বলেছে, সেটুকুই ফাঁকা আছে। ওখানে কী ভাবে আলু রাখা সম্ভব?”

এ দিন বিক্ষোভের প্রায় একই রকম ছবি দেখা গিয়েছে গোঘাটের কামারপুকুরের কঙ্কালি হিমঘরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ সে কথা মানেনিয় পরে পুলিশের মধ্যস্থতাতেই আলুর বন্ড (হিমঘরে আলু রাখার নথিপত্র) বিলি করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত তিনটে থেকে ওই হিমঘরের সামনে লাইন দেন আলুচাষিরা। বুধবার সকাল সাতটায় হিমঘর খোলামাত্র লাইন ভেঙে বন্ড দেওয়ার কাউন্টারে পৌঁছনোর হুড়োহুড়ি লেগে যায়। বিশৃঙ্খলায় বন্ড দেওয়া শুরুই করতে পারেননি হিমঘর কর্তৃপক্ষ। ক্ষুব্ধ চাষিরা হিমঘরের বৈদ্যুতিক তার এবং লোহার গেট ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। হিমঘর কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন।

হিমঘরের মালিক পক্ষের তরফে শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “এ বার গোঘাটে আলুর ফলন সর্বকালীন রেকর্ড। কিন্তু আলুর দাম নেই। স্বভাবতই চাষিরা অভাবী বিক্রি এড়িয়ে ভবিষ্যতে দামের আশায় হিমঘরে আলু মজুত রাখতে চাইছেন। পুলিশের উপস্থিতিতে মোট ৭০ হাজার প্যাকেট (এক প্যাকেট ৫০ কেজি) আলুর বন্ড দেওয়া হয়েছে ১৪০০ চাষিকে।” মহকুমা বাকি ৩৬টি হিমঘরে গোলমাল না হলেও বন্ড সংগ্রহের ভিড় নজিরবিহীন ছিল বলেই কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে চাষিদের বাঁচাতে সরকারকে ন্যায্য মূল্যে আলু কিনতে হবে, দাবি করে এ দিন বিকেলে বৈঁচির জি টি রোডে আলু পুড়িয়ে অবরোধ করে এসইউসি। সরকারকে চাষিদের থেকে কেজিপ্রতি ৮ টাকা দরে আলু কিনতে হবে, এই দাবিতে এ দিন আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুইয়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সিপিএমের কৃষক সংগঠন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন