গোলমালের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও ছন্দে ফেরেনি রিষড়ার হেস্টিংস জুটমিল।
বৃহস্পতিবার কোনও শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। ফলে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ছিল এ দিনও। শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, দু’টি শিফ্ট নয়, তিন শিফ্টেই কাজ চালানো হোক। একজন কর্মীকেও যাতে ছাঁটাই হতে না হয়, তা নিশ্চিত করুন মিল কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকেও মধ্যস্থতার আর্জি জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। রাজ্য শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ওই মিলের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। সেখানকার সমস্যা সমাধানে আগামী সপ্তাহেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হবে। সরকার, মিল কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কোর কমিটিও তৈরি করা হবে।’’ তবে এর আগে আজ, শুক্রবার কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করার কথা শ্রীরামপুরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার অমল মজুমদারের।
তিনটি শিফ্টের বদলে দু’টি শিফ্টে কাজ করানো হবে, কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বুধবার তুলকালাম হয় ওই জুটমিলে। কাজ হারানোর আশঙ্কায় শ্রমিকদের একাংশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মিলে ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষোভকারীদের হাতে মার খেয়ে জখম হন তিন পুলিশকর্মী। মিলে ভাঙচুর এবং পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ১৪ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
মিলের আইএনটিটিইউসি সহ-সভাপতি সাকির আলি বলেন, “মিল যেমন চলছিল, তেমনই চলুক। তিনটির পরিবর্তে দু’টি শিফ্টে কাজের দরকার নেই।’’ এআইটিইউসি নেতা প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রশাসন শ্রমিকদের কাজের সুরক্ষার বিষয়টা নিশ্চিত করুক। কাউকে যেন কাজ হারাতে না হয়।’’ বেঙ্গল জুটমিল ওয়ারর্কাস্ ইউনিয়নের সভাপতি দিলীপ ভট্টচার্য বলেন, “বুধবারের ঘটনার সঙ্গে শ্রমিক স্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই। ওই ধরনের ঘটনা শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করে মালিকের হাত শক্তিশালী করবে। আমরা অবিলম্বে মিলের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখতে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।”
অন্যদিকে, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেরও শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলের ফাইন ইয়ার্ন বিভাগের সমস্যা মিটল না। শ্রমিকদের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে গত শনিবার ওই বিভাগে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝোলান মিল কর্তৃপক্ষ। বুধবার শ্রীরামপুরের ডেপুটি কমিশনার অমল মজুমদারের দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে মিল খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও অমলবাবুর দাবি, “আলোচনা সদর্থক হয়েছে।” তিনি জানান, ১১ নভেম্বর ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করা যায় সমস্যার সমাধান হবে।