৩২টি স্কুলে নয়া পরিচালন সমিতি গড়তে নির্দেশ, স্বস্তিতে শিক্ষকেরা

মাস খানেক আগে উত্তরপাড়ার ৩১টি-সহ হুগলির ৩২টি স্কুলের পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। কেননা, শাসক দলের বিধায়ক অনুপ ঘোষাল, তাঁর মেয়ে এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠেরা ওই সব সমিতির সভাপতি পদে বসে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন বলে দলেরই একাংশ অভিযোগ তোলেন। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বাঁধে। তাই সেই সব সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে, স্কুল পরিচালনায় নানা সমস্যায় পড়ছিলেন শিক্ষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫১
Share:

মাস খানেক আগে উত্তরপাড়ার ৩১টি-সহ হুগলির ৩২টি স্কুলের পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। কেননা, শাসক দলের বিধায়ক অনুপ ঘোষাল, তাঁর মেয়ে এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠেরা ওই সব সমিতির সভাপতি পদে বসে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন বলে দলেরই একাংশ অভিযোগ তোলেন। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বাঁধে। তাই সেই সব সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে, স্কুল পরিচালনায় নানা সমস্যায় পড়ছিলেন শিক্ষকেরা। এ বার সেখানে নতুন করে পরিচালন সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেয় শিক্ষা দফতর।

Advertisement

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ওই স্কুলগুলির নতুন সমিতি গঠনের অনুমোদন গত মাসের শেষ সপ্তাহে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার স্কুলগুলি শিক্ষা দফতরের দেওয়া নির্দেশ পেয়ে গিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগীদের নাম পাঠানো হয়েছে। স্কুলগুলি নতুন পরিচালন সমিতি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে।

সূত্রের খবর, নতুন করে তৈরি সমিতিগুলিতে অনুপবাবু বা তাঁর পরিবারের কাউকেই রাখা হয়নি। তবে, আগের সমিতির অনেককেই নতুন সমিতিতে রাখা হয়েছে। কোথাও আবার যাঁরা সমিতির সাধারণ সদস্য হিসেবে ছিলেন, তাঁদের সভাপতি হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে।

Advertisement

তৃণমূলেরই এক জেলা নেতা বলেন, “ওই স্কুলগুলির পুরনো সমিতিতে এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক এবং শিক্ষাবিদদের রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিধায়কের করা সমিতিতে তাঁদের বাদ দেওয়ায় এলাকায় জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়াতেই ফের নতুন করে সমিতি গঠন করা হচ্ছে।” এ নিয়ে উত্তরপাড়ার বিধায়ক অনুপবাবুর দাবি, “কারা সমিতি ভাঙলেন, কারাই বা নতুন সমিতি গড়লেন এ সব কিছুই জানি না। কেউ আমাকে কিছু জানাননি। কোনও স্কুলের সঙ্গেই আমার এখন আর কোনও যোগাযোগ নেই।” একই সঙ্গে অবশ্য তিনি আরও দাবি করেছেন, “আমি সভাপতি হওয়ায় মানুষ খুশি হয়েছিলেন। ঠিক করেছিলাম, মাস দু’য়েক পরে নিজে সরে গিয়ে কোনও শিক্ষাবিদকে ওই পদে বসাব।”

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার ৩১টি এবং চাঁপদানির একটি স্কুলের পরিচালন সমিতি ভেঙে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছিলেন সেখানকার শিক্ষকেরা। কেননা, নতুন নিয়মে ব্যাঙ্কের সঙ্গে স্কুলের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে চেকে প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি সভাপতিরও সই থাকার কথা। কিন্তু সভাপতি না থাকায় ওই সব স্কুলে মিড-ডে মিল থেকে শুরু করে অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ছিল।

একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “খেলাধুলো, বাৎসরিক অনুষ্ঠান বা যে কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির ভূমিকা থাকে। স্বভাবতই সমিতি না থাকায় নানা ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছিল। এ বার অবশ্য সেই সমস্যা মিটবে।”

বর্তমা‌ন রাজ্য সরকার সরকারি অনুদানপুষ্ট স্কুলগুলির জন্য আগের বাম আমলে তৈরি পরিচালন সমিতির গঠন বদলে দেয়। তারা ঠিক করে, সমিতির সভাপতি মনোনীত করবে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নের রাশ প্রধানত বিধায়কদের হাতেই উঠে আসে। কয়েক মাস আগে দেখা যায়, উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার ৩১টি স্কুলের মধ্যে অনুপবাবু একাই ১২টির পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর বড় মেয়ে ৯টিতে এবং ছোট মেয়েও একটি স্কুলে ওই পদে রয়েছেন। অন্য স্কুলগুলিতেও ওই পদে ছিলেন অনুপবাবুর ঘনিষ্ঠেরা। বিষয়টি জানাজানি হতেই জলঘোলা শুরু হয়। বিষয়টি নজরে আসতেই পরিস্থিতি আঁচ করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই স্কুলগুলির সমিতি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন