বোমা-বারুদের ধোঁয়া, রণক্ষেত্র পাহাড়ে নিহত ৪

বোমা-বারুদের ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আকাশ, জ্বলল একের পর এক গাড়ি। খুকুরির কোপে পিঠ ফুটো হয়ে গেল এক পুলিশ অফিসারের। আবার কোথাও গুলিতে মোর্চা কর্মীর পেট ফুটো হয়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেল।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী ও প্রতিভা গিরি

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৩:৫১
Share:

ধিকিধিকি: সংঘর্ষে পুড়িয়ে দেওয়া গাড়ির পাশ দিয়েই টহল দিচ্ছে সেনা। শনিবার সিংমারিতে মোর্চার দফতরের কাছে। ছবি: এএফপি।

তিন দিক থেকে তিনটে মিছিল। আর তাতেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠল সিংমারির রাস্তা। বোমা-বারুদের ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আকাশ, জ্বলল একের পর এক গাড়ি। খুকুরির কোপে পিঠ ফুটো হয়ে গেল এক পুলিশ অফিসারের। আবার কোথাও গুলিতে মোর্চা কর্মীর পেট ফুটো হয়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেল।

Advertisement

শনিবার সকালের এই ধুন্ধুমারের ফলে আতঙ্ক গ্রাস করেছে পাহাড়কে। তিন দিন ধরে লুকিয়ে থাকা মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ দিনের শেষে ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেছেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালানোয় তাঁদের ৪ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। যাঁদের মধ্যে এক জন মহিলা।

আরও পড়ুন: গভীর ষড়যন্ত্র দেখছেন মমতা

Advertisement

নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য স্পষ্টই জানান, পুলিশ গুলি চালায়নি। রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও বলেন, ‘‘হামলাকারীরাই ইট-পাথর-বোতল ছোড়ার ফাঁকে গুলি-বোমা ব্যবহার করেছে বলে সন্দেহ।’’ পুলিশের দাবি, মোর্চার হামলায় তাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট কিরণ তামাঙ্গ-সহ ২৯ জন জখম হয়েছেন। কম্যান্ডান্টের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তাঁর বার্তায় গুরুঙ্গ দলের সকলকে পথে নেমে প্রশাসনের চাপ মোকাবিলার নির্দেশ দেন। তার পরেই কালিম্পঙের গরুবাথানে বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ি পুড়েছে। জলঢাকা থানায় ডেপুটেশন দিতে গিয়ে আইসি-র ঘর ভাঙচুরের পরে পুলিশের একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গও এখন আত্মগোপন করে আছেন। তিনিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে মণীশ গুরুঙ্গ (২৪), বিমল শা শঙ্কর (২৫) ও অনিল রাই (২৭)। তিন জনই বিজনবাড়ির বাসিন্দা। চতুর্থ জন নারী মোর্চার কর্মী হলেও রাত পর্যন্ত তাঁর নাম জানানো হয়নি।

আহত: শনিবার দার্জিলিং হাসপাতালে আনা হচ্ছে এক মোর্চা সমর্থককে। ছবি: সন্দীপ পাল।

মোর্চা যে প্রত্যাঘাতের পথে হাঁটতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রশাসনের ছিলই। কিন্তু এ দিন সকালে সিংমারি, পাতলেবাস, লেবং, ঘুম, মানেভঞ্জন, ঘুমভঞ্জনে জাতীয় পতাকা হাতে জড়ো হতে থাকা মোর্চা সমর্থকদের আন্দোলন কতটা মারমুখী হতে পারে, তা পুলিশ বুঝতে পারেনি। সিংমারিতে যখন হাজার হাজার মোর্চা কর্মী এসে পৌঁছন, তখন সেখানে হাতে গোনা ক’জন পুলিশ। ঘুমভঞ্জনেও বন বিভাগের চেক পোস্ট ভেঙে একটি গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। লাঠি হাতে জনা দশেক পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁদের মেরে তাড়ানো হয়।

দিনভর দার্জিলিং

• সকাল ১০টা: কয়েক হাজার মোর্চা সমর্থক সিংমারিতে। ভাঙল ব্যারিকেড।

• ১১টা: পুলিশের লাঠি। পাহাড় থেকে ঢিল, পেট্রোল বোমা। ছত্রভঙ্গ পুলিশ।

• দুপুর ১২টা: পুড়ল পুলিশের ৬ গাড়ি। গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ মোর্চার।

• ১টা: শহরে সেনা। পুলিশ অফিসারকে কোপ। জখম অন্তত ১০ পুলিশ।

• ২টা: ঘুমভঞ্জনে পুলিশ-মোর্চা সংঘর্ষ। কাঁদানে গ্যাস। ৪ পুলিশ আহত।

• বিকেল ৩টে: দুই মোর্চা কর্মী গ্রেফতার। বাড়ানো হল সেনা টহল।

• ৪টে: সদর থানায় পুলিশ, সেনা, সিআরপি বৈঠক।

এর মধ্যে চকবাজারের মুখে একটি মিছিল আটকে দেয় আধাসেনা ও পুলিশ। কিন্তু সিংমারিতে ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। পরের পর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। মোর্চার অভিযোগ, তখনই পুলিশ অন্তত ১০ রাউন্ড গুলি চালায় আর তাতেই ৪ জনের মৃত্যু হয়। যে দাবি খারিজ করেছেন দার্জিলিঙের বিশেষ দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার জাভেদ শামিমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন