বহরমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। অবিলম্বে জেলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে জেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে রাজ্য সরকারের কারা সচিবের কাছে ৮ দফা সুপারিশ পাঠাল কমিশন।
গত ২৬ মে মানবাধিকার কমিশনের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল বহরমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ঘুরে দেখেন। দলটি জেল সুপার নন্দনকুমার বড়ুয়া ও জেলের দুই চিকিৎসক অভিজিৎ নান ও আরএস প্রসাদ রবির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করে। পরে জেল সুপারের কাছে লিখিত ভাবে ২৫টি প্রশ্নের ব্যাখ্যা তলব করে কমিশন। কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যায় সামগ্রিক ভাবে কমিশন সন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রশ্ন তুলেছেন জেলের নিরাপত্তা নিয়ে।
বহরমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারের দাখিল করা রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে সেখানে ২০৫৪ জন বন্দী থাকলেও ৩২০ জন কর্মীর ৯৬টি পদ দীর্ঘ দিন শূন্য পড়ে। ২৩৯ জন ওয়ার্ডার (জেল পুলিশ) থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১৭৯ জন। মহিলা ওয়ার্ডার ২০ জনের জায়গায় ৪টি পদ খালি রয়েছে। হেড ওয়ার্ডার ১২ জনের জায়গায় আছেন ৩ জন, অর্থাৎ ৯টি পদ শূন্য। শূন্য চিফ হেড ওয়ার্ডারের পদও। ৩ জন চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছেন ২ জন। নেই কোনও বিশেষজ্ঞ ও মহিলা চিকিৎসক। একটি ফার্মাসিস্টের পদও খালি রয়েছে। জেলের মধ্যে ইসিজি, এক্সরে, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি নেই। জেলে শিক্ষক থাকার কথা ৬ জন। কিন্তু নেই একজনও। ২ হাজারের বেশি বন্দির জন্য মাত্র ৩ জন সাফাই কর্মী থাকায় ঠিকা চুক্তিতে ৭ সাফাই কর্মীকে নিয়োগ করে কাজ চাচানো হচ্ছে।
শুধু কর্মীর অভাবই নয়— পাহারাদার পুলিশের অভাবে বিচারাধীন বন্দীদের আদালতে হাজির করতে সমস্যার সৃস্টি হচ্ছে বলেও কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে খবর। ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা এখনও চালু হয়নি। এই অবস্থায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন রাজ্য সরকারকে জেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যবস্থা নিতে জন্য গত ১৫ জুন ৮ দফা সুপারিশ পাঠিয়েছেন। সেখানে কী বলা হয়েছে?
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলখানায় এমন বহু ঘর রয়েছে যার সংস্কার করা দরকার। পূর্ত দফতরকেও যাবতীয় কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার। সব নথির ‘ডিজিটাইলেসন’ও জরুরি। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রতি রাতে নিয়মিত রাত পাহারা চালু রাখতে হবে। অকেজো সিসি ক্যামেরা চালু করতে হবে। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়োগ করে জেলে বিনোদন, শিক্ষা ও বিভিন্ন কারিগরি কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘রাজ্য কারা দফতরের সঙ্গে কথা বলে জেল সুপারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জেলে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। দ্রুত সে সব কাজও করা হবে। নিরাপত্তার ব্যাপারেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
বহরমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে গড়ে প্রায় ২২০০ বন্দী থাকে। এই মুহূর্তে সেখানে যাবজ্জীবন বন্দী রয়েছে ৪৮৭ জন। তাদের মধ্যে মহিলা ৩৪ জন। মাদক সংক্রান্ত মামলায় ১৫ জন মহিলা-সহ বন্দি রয়েছে ৩৩৮ জন। এদের ৫ জনের সাজা হয়েছে। অনুপ্রবেশ-সহ বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রয়েছেন ৩৩৪ জন। আরও ৫৫ জন বাংলাদেশীর বিচার চলছে। বন্দী মহিলাদের সঙ্গে নাবালক শিশু রয়েছে ২৮ জন।
৬ জন বন্দিপিছু এক জন কর্মী থাকার নিয়ম থাকলেও বহরমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তা নেই বলেও জানিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন।