‘মেয়ে হল কেন? আরও পাঁচ লক্ষ টাকা লাগবে!’

কেউ এনে দিয়েছেন দুধ, চা, পাউরুটি। কেউ আবার তালা ভেঙে বাড়িতে ঢোকার সাহস জুগিয়েছেন।

Advertisement

অনল আবেদিন

লালবাগ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২২
Share:

শ্বশুরবাড়ির দরজায় আকুতি পাপিয়া সুলতানার। মুর্শিদাবাদের এলাহিগঞ্জে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

মেরুন বন্ধ লোহার দরজার সামনে নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন এক মহিলা। কোলে আড়াই বছরের মেয়ে। মায়ের কোলে মুখ গুঁজে সে-ও ফোঁপাচ্ছে। শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদের এলাহিগঞ্জের ফালি গলির সামনে অসহায় মা-মেয়েকে দেখে কেউ চমকে উঠেছেন। কেউ এনে দিয়েছেন দুধ, চা, পাউরুটি। কেউ আবার তালা ভেঙে বাড়িতে ঢোকার সাহস জুগিয়েছেন।

Advertisement

বছর তেইশের পাপিয়া সুলতানার অভিযোগ, ‘‘বিয়ের সময় স্বামী মাইনুল ইসলাম নগদ আড়াই লক্ষ টাকা, পাঁচ ভরি সোনা ও অন্য সামগ্রী পণ নিয়েছে। আড়াই বছর আগে মেয়ে হওয়ার পরে স্বামী বলেন, ‘মেয়ে কেন? আরও পাঁচ লক্ষ টাকা লাগবে।’ বাবার বাড়ি থেকে সেই টাকা দিতে না পারায় বৃহস্পতিবার আমাকে ও মেয়েকে বাড়ি থেকে বের দিয়েছে।’’

দু’দিন মেয়েকে নিয়ে এক পড়শির বাড়িতে ছিলেন। শনিবার সেখান থেকে ফিরে পাপিয়া দেখেন, শ্বশুরবাড়ির সদর দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়িতে কেউ নেই। শেষতক পড়শিদের থেকে একটা হাতুড়ি চেয়ে নিয়ে তালা ভেঙে মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেছেন পাপিয়া। তিনি বলছেন, ‘‘ঢুকলাম তো বটে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন থাকতে পারব, জানি না!’’ মুর্শিদাবাদের আইসি আশিস দেব বলেন, ‘‘ওই মহিলা মৌখিক ভাবে আমাদের সবটাই জানিয়েছেন। তিনি ও তাঁর মেয়ে যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন সে ব্যাপারে আমরাও নজর রাখছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ছেলে চাই, নিশ্চুপে হারায় শিশুকন্যারা

পাপিয়ার মা আঙ্গুরা বেওয়ার অভিযোগ, ‘‘ধার করে দু’লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জামাই পাঁচ লক্ষ টাকাই নেবে। এত টাকা কোথায় পাব, বলুন তো!’’ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে এক বার মায়ের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন পাপিয়া। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করেন। মাসখানেক আগে গ্রাম্য সালিশির সিদ্ধান্ত মেনে মেয়েকে নিয়ে ফের স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন পাপিয়া। অভিযোগ, ফের টাকা চেয়ে শুরু হয় অত্যাচার।’’ পাপিয়ার দাবি, মাইনুল তৃণমূলের কর্মী। তাঁর এক কাকিমা মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সদস্য। সেই কারণে এলাকার লোকজনও তাঁদের কিছু বলতে সাহস পান না।

আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে মাংস কাটা, দৃশ্যদূষণ উত্তরবঙ্গ জুড়ে

মাইনুলকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন ‘‘খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’ তৃণমূলের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মুর্শিনা বেগম বলেন, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তৃণমূলের লালবাগ মহকুমা সভাপতি রাজীব হোসেনেরও আশ্বাস, ‘‘প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে বলব। দলীয় স্তরেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন