Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্রকাশ্যে মাংস কাটা, দৃশ্যদূষণ উত্তরবঙ্গ জুড়ে

গোটা রাজ্যের মতো উত্তরবঙ্গ জুড়ে চলছে আইন ভেঙে প্রকাশ্যে মাংস কাটা এবং বিক্রি। প্রতিকারে কী ভাবছেন নাগরিক ও পরিবেশপ্রেমীরা? এ বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।প্রকাশ্যে মাংস কেটে ঝুলিয়ে বিক্রি বন্ধ রুখতে এমনই নিয়ম চালু ছিল ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা মালদহের ইংরেজবাজার শহরে। 

 মাংস-বাজার: শিলিগুড়ি বিধান মার্কেটের মুরগিহাটি। —নিজস্ব চিত্র।

মাংস-বাজার: শিলিগুড়ি বিধান মার্কেটের মুরগিহাটি। —নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৩
Share: Save:

নব্বই-এর দশক। তখনও বাজারগুলিতে ছিল মাংস কাটার ঘর। সেই ঘরগুলিতেই কাটা হত মাংস। আর মাংসের উপরে সিল মেরে দিত পুরসভা। খাসি, পাঁঠা এবং ছাগল তিন ধরনের সিল মেরে দিতেন পুরসভার কর্মীরা। আর প্রকাশ্যে মাংস কেটে ঝুলিয়ে বিক্রি বন্ধ রুখতে এমনই নিয়ম চালু ছিল ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা মালদহের ইংরেজবাজার শহরে।

নব্বইয়ের দশকেও ইংরেজবাজার শহরের কোথাও দেখা যেত না প্রকাশ্যে মাংস কাটার দৃশ্য। তবে ২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে ছবিটা বদলে গিয়েছে শহরের। গলি থেকে শুরু করে রাজপথ। সপ্তাহের সাতদিনই চোখে পড়বে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা রয়েছে মাংস। শুধু ঝুলিয়ে রাখায় নয়, প্রকাশ্যেই কাটা হচ্ছে খাসি, পাঁঠাও। রাস্তায় নালার মতো গড়ে যায় রক্ত। সেই রক্তের উপর দিয়েই চলাফেরা করতে হয় মানুষকে। প্রকাশ্যে মাংস কাটার বিষয়ে শহরের প্রাক্তন প্রবীণ এক কাউন্সিলর বলেন, “আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে প্রকাশ্যে মাংস কাটা হত না। বাজারগুলির নির্দিষ্ট ঘরে মাংস কাটা হত। পুরসভার কর্মীরা সেখানে উপস্থিত থাকতেন। তারপরে বাজারের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় কেনাবেচা চলত মাংস।” এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, “এখন বাজারের পাশাপাশি রাস্তার উপরেই ছুরি, চাকু দিয়ে পশুপাখি কাটা হচ্ছে। রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকছে। চামড়া ছিলে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখলে সত্যিই গা শিউরে ওঠে!”

সপ্তাহ দু’য়েক আগের ঘটনা। ইংরেজবাজার শহরের কৃষ্ণপল্লি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে চলছিল মাংস কাটার কাজ। সেই সময় মাংসের দোকানে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে হাজির শহরের এক বাসিন্দা। প্রকাশ্যে ছুরি দিয়ে খাসি কাটতে দেখে শিউরে ওঠে ওই মেয়েটি। আতঙ্কে কান্না জুড়ে দেয়। মেয়েকে নিয়ে মাংস না কিনেই চলে যান ওই ব্যক্তি। ছবির বদল হয়নি ওই এলাকায়। এখনও কৃষ্ণপল্লি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একই ভাবে মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি হচ্ছে।

শুধু কৃষ্ণপল্লির ওই এলাকায় নয়, ইংরেজবাজার শহর জুড়ে প্রকাশ্যে মাংস কেটে ঝুলিয়ে বিক্রি করা হয়। শহরের কোঠাবাড়ি, কৃষ্ণপল্লি, মালঞ্চ পল্লি, নেতাজি সুভাষ রোড, মকদমপুর, গৌড় রোড, ফুলবাড়ি, বিশ্বনাথ মোড় সহ শহরের যত্রতত্র খাসি, পাঁঠার মাংস কেটে ঝুলিয়ে রাখা থাকছে। ইংরেজবাজার পুরসভার সামনেও সকাল বেলায় মাংস কেটে ঝুলিয়ে রেখে বিক্রি করতে দেখা যায়। শহর জুড়েই প্রায় দু’শতাধিক মাংসের দোকান রয়েছে। দোকানের সংখ্যাও বাড়ছে। মুরগির মতো পাঁঠা, খাসি প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে। আর সেই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছেন শহরবাসী। তাই প্রকাশ্যে মাংস কেটে বিক্রি বন্ধের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে পুরসভার ভুমিকা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ, পুরসভার নজরদারির অভাবে প্রকাশ্যে মাংস কেটে বিক্রির প্রবণতা বাড়ছে শহরে। স্কুলশিক্ষক মৃণাল চৌধুরী বলেন, “ছোটবেলায় আমরা কখনও প্রকাশ্যে মাংস কাটতে দেখেনি। বিয়ে কিংবা অনুষ্ঠান বাড়িতেও খাসি বা পাঁঠার মাংস কাটা হত নির্জন স্থানে। আর বাড়ি থেকে আমাদের সেই মাংস কাটার স্থানে যেতে দেওয়া হত না। এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের চোখের সামনেই দেখছে রাস্তার উপরে কী ভাবে মাংস কাটা হচ্ছে।”

প্রকাশ্যে কি মাংস কেটে ঝুলিয়ে বিক্রি করা যায়? পুরসভার এক কর্তা স্বীকার করলেন, এমন ভাবে মাংস কাটার নিয়ম নেই। নিয়ম অনুযায়ী বন্ধ ঘরে মাংস কাটতে হবে। মাংস কেটে ঝুলিয়েও রাখা যায় না। ঢেকে রেখে বিক্রি করতে হয়। তারপরেও কী ভাবে চলছে প্রকাশ্যে মাংস কেটে বিক্রি? পুরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম করে অভিযান চালানো হয়। প্রকাশ্যে ঢেকে বিক্রি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ফের বাজারে অভিযান চালানো হবে।

খাসি কিংবা পাঁঠার মাংসের চাহিদা বেড়েছে। খাসির মাংসের দাম ৫৮০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়। তাও দেখা যায় দোকানে মাংস নেওয়ার জন্য ভিড় উপচে পড়ছে। এক মাংস বিক্রেতার কথায়, ‘‘ক্রেতারা মাংস চোখের সামনে কাটতে দেখার পরই তা কিনতে চান। নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই পথ নিতে হচ্ছে আমাদের! পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিলে ভালই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Meat shop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE