রাজারহাটে সমর্থকের বাড়িতে অমিত শাহ। বীরপাড়ার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: শৌভিক দে ও নারায়ণ দে।
তিন দিনের সফরে এসে অমিত শাহ যখন বাংলা দখলের ঘুঁটি সাজিয়ে গেলেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বৃহস্পতিবার বললেন, ‘‘ওরা বাংলাকে টার্গেট করলে দিল্লিতে আমরা সরকার গড়ব।’’
এ যাত্রায় শেষ বুথ-কর্মী সম্মেলন রাজারহাটের গৌরাঙ্গনগরে সেরে এ দিন ফিরে যান বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। যাওয়ার আগে রাজারহাটে বলে যান, ‘‘তিন দিনে আমি বাংলায় অভূতপূর্ব উৎসাহ দেখলাম। আমি নিশ্চিত, এ বার এখানে বিজেপি-র সরকার হবে। আবার সোনার বাংলা হবে।’’ বঙ্গে অমিতের তৎপরতার জবাবে মমতাও মঙ্গলবার থেকে টানা আক্রমণ করে যাচ্ছেন তাঁকে। এই সফরে হতদরিদ্র বাড়িতে অমিতের খাওয়াকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘সকালে টাকা দিয়ে কোনও বস্তি বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসেন। বিকেলে চলে যান ফাইভ স্টার হোটেলে। এমন দ্বিচারিতার মানে কী?’’
আরও পড়ুন:দুর্নীতির চার্জশিট তাপস, সুদীপকে
অমিত এবং মমতার পারস্পরিক আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের মধ্যে অবশ্য নতুনত্ব কিছু নেই। তবে নতুন হল, এ দিনই প্রথম বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি গৌরাঙ্গনগরে একটি বুথের ভোটার তালিকা ধরে কর্মীদের শিখিয়েছেন, কেমন করে মানুষকে কাছে টানতে হবে। দলীয় সূত্রের খবর, বুথ-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে অমিত বলেছেন, একটি বুথে ১০০০ ভোটার এবং ২৫ জন কর্মী থাকলে সব ভোটারের দায়িত্ব কর্মীদের মধ্যে ভাগ করে নিতে হবে। এক জন কর্মী যদি ২৫ জন করে ভোটারের দায়িত্ব নেন, তা হলে তাঁকে সারা বছর ওই ভোটারদের সুখে-দুঃখে সঙ্গে থাকতে হবে। যাতে ভোটের দিন ওই ২৫ জনের ভোট পদ্মফুলেই পড়ে। বুথ-কর্মীরা এ দিন অমিতের কাছে তৃণমূলের সিন্ডিকেট-রাজ এবং তার জেরে সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।
যত অত্যাচার হবে ততই বেশি করে বাংলায় পদ্ম ফুটবে।
সারদা থেকে নারদ, টাকা লুঠ হয়েছে। কারখানা বন্ধ। চালু শুধু বোমার কারখানা।
বাংলার মাটি শক্ত ঘাঁটি। বাঘ আঁচড়ালেও দাঁত ভেঙে যাবে।
গরুর নাকি আধার কার্ড চাই। তা হলে যে শিশুরা দুধ খাবে, তাদের কি দাঙ্গাকার্ড দেবে?
বাংলায় ফলন
কমেছে। কারখানার দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
২০১১ থেকে পাঁচ বার চাষে আমরাই সেরা। শিল্পেও দেশের থেকে এগিয়ে।
বাংলার মতো
গরিবি আর কোথাও নেই।
বাংলায় এ বার মানুষের সরকার হবে।
সকালে বস্তিতে
খেয়ে বিকেলে যান ফাইভ স্টার হোটেলে। এই দ্বিচারিতার মানে কী!
অমিত শাহ
দলীয় সূত্রের আরও খবর, বুধবার দলের রাজ্য পদাধিকারী এবং জেলা সভাপতিদের বৈঠকে অমিত বলেছেন, প্রত্যেককে বুথ স্তরে ১৫ দিন করে থাকতে হবে। যে সব নেতা-কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি গিয়ে ফের কাজে নামাতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারে জনস্বার্থের প্রকল্পগুলি বুথ স্তরে প্রচারের নির্দেশও দেন অমিত। বৈঠকে এক জন নেতা অভিযোগ করেন, রাজ্যের অনেক আইএএস এবং আইপিএস অফিসারই তৃণমূলের স্তাবক। তাঁদের স্বপদে রেখে পঞ্চায়েত ভোট হলে মানুষ ইচ্ছে থাকলেও বিজেপি-কে সমর্থন করতে পারবেন না। ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র যাতে ব্যবস্থা নেয়, তার জন্য অমিতকে আর্জিও জানান ওই নেতা। সারদা এবং নারদ কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের শাস্তি দিতে কেন্দ্রীয় সরকার যেন উদ্যোগী হয়, এই অনুরোধও অমিতকে করেন নেতারা।
আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতাদের সঙ্গে এ দিন অমিতের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।