‘সিবিআই না পারলে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক আমি খুঁজে দেব’

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর কোনও প্রশাসনিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘সেন্টিমেন্ট’ আছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ওই আবেগ তাঁর একার নয়। গোটা বাংলার মানুষের। সেই রবি ঠাকুরের নোবেল পদক চুরি গিয়েছে বারো বছর হয়ে গেল। কোনও কিনারা হল না।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

শান্তিনিকেতনে ছাতিমতলায় মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর কোনও প্রশাসনিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘সেন্টিমেন্ট’ আছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ওই আবেগ তাঁর একার নয়। গোটা বাংলার মানুষের। সেই রবি ঠাকুরের নোবেল পদক চুরি গিয়েছে বারো বছর হয়ে গেল। কোনও কিনারা হল না। বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বভারতীতে এসে বললেন, ‘‘নোবেল চুরির তদন্তে সিবিআই কী করল জানি না। ওরা না পারলে আমি যদি তদন্তের সুযোগ পাই, খুঁজে বার করবই।’’

Advertisement

বীরভূমে প্রশাসনিক বৈঠকের পর্ব মেটার পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্তের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার বিকেলে লিপিকা সদনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই শিক্ষক-শিক্ষিকা-পড়ুয়াদের সামনে তিনি বলেন, ‘‘খুব খারাপ লাগে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক চুরি হয়ে যায়...।’’ পদকের একটি রেপ্লিকা এখন রাখা হয়েছে বিশ্বভারতীতে। সিবিআই দু’দফায় তদন্ত চালিয়েও মূল পদকের খোঁজ পায়নি। আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত বন্ধ করেছে তারা। সেই কারণেই এ দিন তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। সুযোগ পেলে যে তিনি শেষ চেষ্টা করে দেখতে চান, জানান সে কথাও।

এর পরেই মমতা যোগ করেন, ‘‘কথাটা বললাম, কারণ আমার কাছে রবীন্দ্রনাথ একটা সেন্টিমেন্ট। তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) সম্মান শুধু বাংলার নয়, গোটা বিশ্বের।’’

Advertisement

২০০৪ সালের ২৫ মার্চ সকালে জানা যায়, রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা থেকে নোবেল পদক-সহ মোট ৫০টি মূল্যবান জিনিস চুরি গিয়েছে। ঘটনার ছ’দিনের মাথাতেই চুরির তদন্তের দায়িত্ব চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। প্রথম দফায় ২০০৭ সালের অগস্টে তদন্ত গুটিয়ে নেয় সিবিআই। তার পরে আবার নতুন সূত্র মিলেছে বলে জানিয়ে ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে আদালতে পুনর্তদন্তের আবেদন জানায় তারা। লাভ হয়নি। কারণ তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি, এই যুক্তিতে ২০০৯-এর অগস্টে ফের সিবিআই তদন্ত বন্ধ রাখার আবেদন করে। ২০১০-এর ৫ অগস্ট আদালত সিবিআইকে সেই অনুমতি দেয়। সিবিআই জানিয়েছিল, এ ব্যাপারে আবার নতুন করে কোনও সূত্র মিললে তারা ফের তদন্ত শুরু করতে পারে।

সেই শেষ। নোবেল চুরির তদন্তে আর কোনও নাড়াচাড়া হয়নি। সিবিআই সূত্রের দাবি, চুরি যাওয়া নোবেল পদক সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। সাহায্য চাওয়া হয়েছিল ইন্টারপোল-এর। তবে তাতেও কাজ হয়নি। সিবিআইয়ের এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের অনুমান ছিল— ভিনদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে নোবেল পদক। পদকটি হয় গলিয়ে ফেলা হয়েছে বা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তবে এগুলো অনুমানই। সরকারি ভাবে নোবেল পদকের ঠিক কী হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানায়নি সিবিআই। এ দিন মমতা সেই প্রসঙ্গই সামনে এনেছেন। রাজ্য সরকার তদন্ত চালালে সাফল্য আসবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস শুনে স্বপনবাবু বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি তদন্ত চালিয়ে পদক উদ্ধার করতে পারেন, তা হলে সে উদ্যোগকে স্বাগত।’’ পদক ফেরত আনতে পারলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রবীণ আশ্রমিক তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুরও। আর রবীন্দ্রভবনের বর্তমান অধ্যক্ষ তপতী মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘নোবেল পদক যদি খুঁজে পাওয়া যায়, তার থেকে আনন্দের আর কিছু নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement