‘অবৈধ’ কেনাকাটা ৯ লাখ, তদন্তের মুখে সিএমওএইচ

চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় ব্যাপক আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু হল হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-এর বিরুদ্ধে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০০
Share:

চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় ব্যাপক আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু হল হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-এর বিরুদ্ধে।

Advertisement

অনলাইন পদ্ধতি এড়িয়ে এবং স্বাস্থ্য ভবনকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সিএমওএইচ ভবানী দাস একটি সংস্থার থেকে ৯ লক্ষ টাকারও বেশি দামের জিনিসপত্র কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কেনাকাটা হয়েছে দু’খেপে, গত অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে। কাগজপত্রে ভবানীদেবীর সই আছে। গত ২৯ অগস্ট কেনা হয়েছে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭১৪ টাকার জিনিসপত্র। আবার ৮ সেপ্টেম্বর ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকার জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। সেগুলি হাওড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহও করা হয়েছে। অথচ সেই সময়ে ওই সমস্ত সরঞ্জামই হাসপাতালগুলির ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত ছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্তার দাবি।

হাসপাতালে চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন রঙের ব্যাগ, বিন, পাংচার প্রুফ কন্টেনার, সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট, সিরিঞ্জ-কাটার যন্ত্রের মতো সরঞ্জাম সিএমওএইচ ভবানীদেবী নিজে সই করে কিনেছেন বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, এই সরঞ্জামগুলি ‘সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর’ (সিএমএস) অনুমোদিত ‘ক্যাটালগ আইটেম’। অর্থাৎ, সেগুলি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়ে সিএমএস অনুমোদিত সংস্থার কাছ থেকেই কেনার নিয়ম। ভবানীদেবী কোনও নিয়মই মানেননি। সব চেয়ে বড় কথা, জেলার সিএমওএইচের আদৌ কোনও কেনাকাটা করারই কথা নয়। সেই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের। উপরন্তু ভবানীদেবী এমন একটি সংস্থার থেকে কেনাকাটা করেছেন, যাদের সিএমএসের অনুমোদনই নেই!

Advertisement

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্বাস্থ্য দফতরেও ওই সংস্থার থেকে অবৈধ কেনাকাটা হয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য এসেছে। মোটা কমিশনের লোভেই কিছু সংস্থাকে অনৈতিক ভাবে আর্থিক সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, এমন অভিযোগও এই ঘটনার পরে জোরদার হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভবানীদেবী প্রথমে বলেন, ‘‘আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ওই সব সরঞ্জাম ‘নন-ক্যাটালগ আইটেম’। তাই ভুল করে কিনে ফেলেছি।’’ তাঁর অভিযোগের তির যাঁর দিকে, তিনি হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোরের (ডিআরএস) তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট শান্তনু বেরা। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘ওই সরঞ্জাম কেনার জন্য জেলা স্টোরে কোনও কাগজই জমা দেননি ভবানীদেবী। অনেক দিন ধরেই আমাকে জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ফোন করে বলছে, ‘যে জিনিস আমাদের ভাঁড়ারে রয়েছে সেটাই আবার সিএমওএইচ কিনে পাঠাচ্ছেন। আমরা নেব কি না বুঝতে পারছি না। ফেরতও দিতে পারছি না।’ ভবানীদেবী ওই সব জিনিসপত্র যখন কিনেছিলেন, তখন সব জিনিসই ডিআরএসে ছিল।’’

পরে ভবানীদেবী আবার সুর পাল্টে বলেন, ‘‘আসলে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অনেক টাকা এসে দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। ওরা কাজ করছিল না। সেই টাকা খরচ করার জন্য আমরা কেনাকাটা করেছি। তাঁর আরও যুক্তি, ‘‘হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং রোগীদের স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ব্যাপারটা বেআইনি হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন হবে না।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেছেন, ‘‘টাকা পড়ে থাকলে তিনি সুপারদের দিয়ে জিনিস কেনাতেন না কেন? বা টাকা ফেরত পাঠাতেন না কেন? তিনি যা করেছেন তা খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বিস্তারিত খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন