পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তিন বছর, তিন মাস এবং তিন কারাবন্দি থাকার পর জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, বিধানসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিধায়ক হিসাবে যোগ দিতে চান তিনি। প্রাক্তন পরিষদীয়মন্ত্রীর এমন বাসনার কথা জেনে গিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিধানসভা সচিবালয়। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, বিধানসভায় যোগদান করতে এলে পাঁচ বারের বিধায়ক পার্থ বসবেন কোথায়? কারণ, তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হলেও, বর্তমানে পার্থ দল থেকে নিলম্বিত। তাই ইচ্ছে থাকলেও, নিজের পছন্দের ট্রেজ়ারি বেঞ্চে বসা হবে না প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর।
বৃত্তাকার বিধানসভার অধিবেশনকক্ষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডান দিকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যেরা। তার পর বৃত্তাকার ভাবেই বসেন শাসকদলের বিধায়কেরা। অপর দিকে, স্পিকারের বাঁ দিকে বসে বিজেপি পরিষদীয় দল। এমতাবস্থায় পার্থকে কোথায় বসতে দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এমন প্রশ্নে মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূলের পরিষদীয় দলের সদস্যেরা। যেহেতু পার্থকে দল থেকে নিলম্বিত করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাই এ ক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এঁটেছেন শাসকদলের বিধায়কেরা। তবে বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, শাসকদলের বিধায়কদের আসন যেখানে শেষ হয় এবং যেখান থেকে বিরোধী বিধায়কদের আসন শুরু হয় তারই মধ্যবর্তী কোনও আসনে বসার জায়গা দেওয়া হতে পারে এই প্রবীণ বিধায়ককে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূল এবং বিজেপি বিধায়কেরা ছাড়াও রয়েছেন আরও এক জন বিধায়ক। তিনি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নওশাদ সিদ্দিকি, যাঁকে বিধানসভায় বসতে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়কদের মধ্যবর্তী একটি আসনে। পার্থের ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সাম্প্রতিক অতীতে আরও এক জন বিধায়কের বসার স্থান নিয়ে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বসিরহাট দক্ষিণ আসন থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বর্তমান রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সেই সময়ও শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস বিধায়কদের মাঝখানের একটি আসনে বসার জায়গা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে নওশাদ বা শমীকের ক্ষেত্রে বিধানসভার সচিবালয়কে এমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারণ, শমীক বা নওশাদ কেউই শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভারও প্রবীণ সদস্যেদের মধ্যেও ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে প্রথম বার বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন পার্থ। ২০০৬ সালে দ্বিতীয় বার বিধায়ক হওয়ার পর তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পার্থকেই বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব দেন। তার পর ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কখনও শিক্ষা, কখনও শিল্প, কখনও বা পরিষদীয় দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। তাই এমন একজন অভিজ্ঞ এবং প্রবীণ বিধায়ককে বিধানসভার অধিবেশনকক্ষে বসার জায়গা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে সতর্ক বিধানসভার সচিবালয়ের আধিকারিকেরা।