প্রশাসনের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। নিজস্ব চিত্র।
কোথাও মাটির ওপর রঙিন আবিরে লেখা বন্দেমাতরম কিংবা জয়হিন্দ। কোথাও আবার তেরঙা পতাকার সামনে করজোড়ে প্রণামে মগ্ন বাসিন্দারা। কোথাও বা জাতীয় সঙ্গীতের সুরে সুর মেলালেন আমলা, পুলিশকর্মী থেকে আমজনতা। শনিবার সকাল ন’টায় একযোগে প্রশাসনের উদ্যোগে যখন তেরঙা জাতীয় পতাকা উড়ছে ৫১টি ছিটমহলে, তখন যেন সব উৎসব তেরঙায় রঙিন।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে প্রায় সাত দশক ধরে বাংলাদেশ ভূখণ্ড বলে পরিচিত ওই ছিটমহলগুলি ভারতের মূল ভূখণ্ডের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন শনিবার বলেন, “সকাল ৯টায় একসঙ্গে ওই ৫১টি এলাকাতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে রাষ্ট্রীয় শোক চলছে বলে পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়। বাসিন্দাদের উৎসাহ ছিল সর্বত্র।”
স্থলসীমান্ত চুক্তির ভিত্তিতে শুক্রবার ৩১ জুলাই রাত ১২টায় দুই দেশের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছে। ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল এলাকা মিশেছে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। শনিবার সকালে একযোগে ভারতের আওতাধীন হওয়া ওই ৫১টি ছিটমহল এলাকাতেই জাতীয় পতাকা তোলার কর্মসূচি নেওয়া হয়। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন নিজে পোয়াতুরকুঠী ছিটমহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য পূর্ব মশালডাঙা, দিনহাটার মহকুমা শাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ মধ্য মশালডাঙা ছিটমহল এলাকায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এছাড়াও প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা বাকি সবকটি ছিটমহলেই পতাকা উত্তোলন করেন।
জাতীয় পতাকাকে সাক্ষী রেখে আলিঙ্গন। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
পূর্ব মশালডাঙায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর এক বৃদ্ধা মাটিতে শুয়ে পড়ে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রণাম করেন। মধ্য মশালডাঙায় চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময় আগে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে থাকা মাটির উপরে গোলাপী আবিরে বন্দেমাতরম কিংবা জয়হিন্দ স্লোগান লেখা ঘিরেও আবেগে ভাসতে দেখা যায় বাসিন্দাদের। হাসেম আলি, তালেব আলি, সুকুর আলির মত বাসিন্দারা আবার নাগরিকত্বহীনতা থেকে রাষ্ট্রহীনতার যন্ত্রণা মুক্তির আনন্দে পরস্পরকে জড়িয়ে আনন্দে মাতেন। উৎসবের মেজাজে সামিল খুদেরাও হাতে পতাকা আর মাথায় ‘আই লভ মাই ইন্ডিয়া’ লেখা টুপি পরে হাজির ছিল।
ছিটমহলে উড়ল ফানুস।
বাঁধভাঙা আবেগের সঙ্গেই ছিল ভবিষ্যত জীবনের জন্য এক চিলতে হলেও উদ্বেগ। প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পেয়ে বাসিন্দারা বিদ্যুৎ, রাস্তা, চিকিৎসার মত নানা সমস্যা মেটাতে আর্জি জানান। প্রশাসনের তরফে পর্যায়ক্রমে এলাকার যাবতীয় সমস্যা মেটানো থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহাল বিনিময় সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছিটমহলগুলি দেশের মূল ভূখণ্ডের আওতাধীন হতেই মশালডাঙায় কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। নাটাবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সেখানে উপচে পড়া, আলোর রোশনাইয়ের মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ছিটমহলগুলিতে বাসিন্দারা স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তোলেন। এদিন সেখানে সরকারীভাবে জাতীয় পতাকা উড়েছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”