মাইনরোধক গাড়ির অভাব নয়। গোয়েন্দা-তথ্যের ঘাটতি নয়। অসতর্ক থাকা বা আত্মতুষ্টিও নয়। সমস্যাটা লুকিয়ে রাস্তা তৈরির কৌশলেই!
১১ মার্চ সকালে ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় ভেজি এলাকার কোত্তাচেরু গ্রামের কাছে মাওবাদী হামলায় ১২ সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় ওই অঞ্চলের রাস্তা নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না-করাকেই মূলত দায়ী করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
সিআরপি-র মতে, মাওবাদী প্রভাবিত ওই এলাকায় রাস্তা তৈরি করতে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে থাকলে এমন ঘটনা এড়ানো মুশকিল। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে খুব কম সময়ে দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করা সম্ভব। তা হলে রাস্তা তৈরির পর্বে স্রেফ পাহারাদারির জন্য দীর্ঘ সময় নিরাপত্তা বাহিনীকে থাকতে হয় না, ঝুঁকিও অনেকটা কমে। এই প্রযুক্তির নাম ‘রোডসেম’। বাহিনীর এক শীর্ষ অফিসার সোমবার জানান, তাঁদের তরফে এই প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের কথা ছত্তীসগঢ় সরকারকে জানানো হয়েছে। সবিস্তার রিপোর্ট দেওয়া হবে খুব তাড়াতাড়িই।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর মতে, রোডসেম-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে দু’দিনে আধ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তৈরি সম্ভব। পুরনো পদ্ধতিতে দু’দিনে বড়জোর ৩০০ মিটার রাস্তা বানানো যায়। বাহিনীর ওই অফিসার জানান, যে-রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প পাহারা দিতে যাওয়ার পথে এত বড় কাণ্ড, মাসের পর মাস ধরে সেখানে কাজ চলছে। তাই মাওবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে হামলার প্রস্তুতি চালাতে পেরেছে।
সিআরপি সূত্রের খবর, দক্ষিণ বস্তারের ওই তল্লাটে পুরনো বহু রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তাও। রাস্তার কাজের সময়ে সরকারি ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ১১ মার্চ, ঘটনার দিন সেই ধরনেরই একটি রাস্তা নির্মাণের কাজে নিরাপত্তা দিতে ভেজি শিবির থেকে রওনা হয়েছিলেন সিআরপি-র ২১৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ১১২ জন জওয়ান। তখনই হামলা চালায় মাওবাদীরা।
ছত্তীসগঢ় পুলিশ জানাচ্ছে, রাস্তার কাজ চলছিল ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই। রোজ সকালে সিআরপি জওয়ানেরা শিবির থেকে হেঁটে সেখানে যেতেন পাহারা দিতে। সূর্যাস্তের আগে ফিরে আসতেন।
ঘটনার পরে অনেকে মাইনরোধক গাড়ির অভাবের কথা বলেছেন। সিআরপি-র এক কর্তা দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘কেউ কেউ এ কথা বললেও ওই পথে গাড়ি ব্যবহার করা হয় না কৌশলগত কারণেই।’’