সপ্তপদী সিনেমার সেই দৃশ্য।
সেই সপ্তপদী। সেই উত্তম-সুচিত্রা। এবং সেই গান।
মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের সচেতন করতে শুধু গানের কথাগুলো একটু বদলে দেওয়া হয়েছে।
বাইক চালাচ্ছেন কৃষ্ণেন্দু (উত্তমকুমার)। হাওয়ায় উড়ছে টাই। তিনি গাইছেন, ‘‘এই পথ যদি না শেষ হয়...।’’ পিছনে বসে রিনা ব্রাউন (সুচিত্রা) খেই ধরছেন, ‘‘দু’টি হেলমেট হলে বেশ হয়।’’
আজ্ঞে হ্যাঁ, এ বারের কালীপুজোয় হেলমেটকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বহরমপুরের নবনগর ইয়ংস অ্যাথলেটিক্স। আর সেই পুজোর উদ্যোক্তারা খোদ উত্তম-সুচিত্রার মুখ দিয়েও বলিয়ে নিচ্ছেন, ‘‘দু’টি হেলমেট হলে বেশ হয়।’’
এক পুজো উদ্যোক্তা হাসছেন, ‘‘সুচিত্রার আবদার নিশ্চয় কেউ ফেলতে পারবেন না! কী বলেন?’’
চমক এখনও বাকি।
মা দুগ্গা কৈলাসে ফিরে গেলেও এ পুজো মণ্ডপে গণেশ এখনও থেকে গিয়েছেন। তাঁর মাথাতেও হেলমেট। তিনি আবার সতর্ক করছেন, ‘‘আমার ভাগ্য ভাল। এক বার মাথা কেটে বাদ হয়ে গেলেও হাতির মাথা সেট হয়ে গিয়েছে। আপনার কিন্তু সেই সুযোগ নেই। তাই হেলমেট ব্যবহার করুন।’’
যাঁর পুজোর জন্য এত কিছু সেই মা কালীর মণ্ডপটাও তৈরি করা হচ্ছে হেলমেটের আদলে।
কেন এমন উদ্যোগ?
ওই পুজো কমিটির সম্পাদক হিমাদ্রী মজুমদার বলছেন, ‘‘হেলমেট না পরার কারণে পথ দুর্ঘটনায় কত পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবুও বহু মানুষের হুঁশ ফিরছে না। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ নিয়ে প্রচারও চলছে। আবার দুর্ঘটনাও থামছে না। তাই লোকজনকে সচেতন করতেই এ বারে আমাদের থিম ‘মা থাকছেন হেলমেটের মধ্যে’। গোটা বিষয়টি আকর্ষণীয় করে তুলতে উত্তম-সুচিত্রা ও গণেশকেও রাখা হয়েছে।’’
বহরমপুরের এই পুজো এ বার ৫০ বছরে পা দিচ্ছে। উদ্যোক্তাদের তাই একটা চমক দিতে চেয়েছিলেন। বৈঠকে হেলমেটের প্রসঙ্গ উঠতেই সক্কলে রাজি হয়ে যান। উদ্যোক্তাদের দাবি, নবনগরে অমর পার্কের মাঠের এই হেলমেট থিমের পুজো দেখতে ভালই ভিড় হবে। পুজোর আর দেরি নেই। মণ্ডপের কাজও চলছে পুরোদমে। ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন। মণ্ডপে পথ নিরাপত্তা বিষয়ক সচেনতামূলক নানা প্রচারের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের হেলমেট পরানোর ব্যাপারে অঙ্গীকার করানোরও পরিকল্পনা আছে উদ্যোক্তাদের।
পুজো কমিটির কত জন সদস্য হেলমেট পরেন?
পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা অলোক পালের দাবি, ‘‘এমনিতেই কমিটির ৮০ শতাংশ সদস্য হেলমেট পরেন। বাকি কুড়ি শতাংশ সদস্যকেও বাধ্য করা হচ্ছে হেলমেট পরতে। এক্ষেত্রে আমাদের থিম ও টার্গেট কিন্তু একই।’’