প্রতীকী ছবি।
যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশে কার্যত ‘বন্ধ’ ভিন্ধর্মে বিয়ে। ‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ বিয়ের নোটিস দিতে গেলেও নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। তাই কলকাতা শহরে এসে বিয়ে সারলেন দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণী। মঙ্গলবার এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নিয়ে ‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ বিয়ে করলেন তাঁরা।
পাত্রী এ রাজ্যেরই। উত্তর ২৪ পরগনার এক হিন্দু পরিবারের মেয়ে, বয়স বছর পঁচিশ। পড়াশোনার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে। সেখানকারই এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে গবেষণা শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে আলাপ হয় সাজিদ রহমানের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে। সেই আলাপ গড়ায় প্রেমে। সাজিদ (৩৫) উত্তরপ্রদেশেরই ছেলে। জেএনইউ থেকে পড়াশোনা সেরে এখন বিহারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন।
ওঁরা দু’জনেই জানাচ্ছেন, যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে রাজ্যে ভিন্ধর্মী বিয়ে কার্যত নিষিদ্ধ! বিশেষত কোনও মুসলিম ছেলে কোনও হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন না বলেই তাঁদের দাবি। এমনকি ‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এর নোটিস দিতে গেলে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার সেই আবেদন গ্রহণ করেন না বলে অভিযোগ। আবেদন গ্রহণ না করার ঘটনা এই যুগলের ক্ষেত্রেও হয়েছে। তাঁদের মুখের উপরে স্পষ্ট ‘না’ বলে দেন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার। সাজিদের কথায়, ‘‘এর পরেও বিয়ে করতে গেলে বাড়িতে এসে হুমকি দেওয়া হবে! পরিবারের বাকিরাও ছাড় পাবেন না!’’
তা হলে কি বিয়ে হবে না? ঠিক হয়, বিয়ে হবে কলকাতায়। আর সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই মাসখানেক আগে এসে ওঁরা আইন মোতাবেক নোটিস দিয়ে যান। এ দিন বিয়েটা সেরেও ফেললেন সই–সাবুদ করে। যদিও উত্তরপ্রদেশে ফিরে গিয়ে বিয়ের কথা জানাজানি হলে কী হবে, সে আশঙ্কা কাটেনি। সাজিদ আজই ফিরছেন বিহারে। মেয়ে ক’দিন বাপের বাড়ি থেকে উত্তরপ্রদেশ চলে যাবেন। মনে ভয়, ‘‘কোনও অসুবিধায় যেন না পড়ি। ওখানে পরিস্থিতি খুব খারাপ।’’
২০০৭ সালে অবশ্য এই শহরও মরতে দেখেছিল রিজওয়ানুর রহমানকে। বিয়ের পরে শাসানি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল নামী ব্যবসায়ীর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা টোডিকে। ইদানীং ভিন্ধর্মে ঘরভাড়া পেতে অসুবিধার কথা শোনা যায় প্রায়ই। সে রকম কোনও সমস্যা যাতে না হয়, সাজিদদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের তরফে কস্তুরী পরে বলেন, ‘‘এ রকম সামাজিক বাধার সম্মুখীন কেউ হলে আমরা ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাব। পাশে থাকব।’’