লটারি-কাণ্ডে মূল চক্রী সান্তিয়াগো মার্টিনকে নাগালের মধ্যে না পেলেও, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পেয়েছেন আয়কর দফতরের তদন্তকারীরা। কিন্তু কাউকেই গ্রেফতার করার ক্ষমতা নেই ওই দফতরের। তাই কপালে ভাঁজ পড়েছে তদন্তকারীদের। মার্টিনের ঘনিষ্ঠরা সুযোগ বুঝে দেশের বাইরে পালিয়ে গেলে কী হবে— সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে তাঁদের।
এ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা গেলেও তদন্তকারীদের ধারণা, লটারি-কাণ্ডে জালিয়াতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
আয়কর দফতরের এক কর্তা শনিবার জানান, লটারি-কাণ্ডের মূল চক্রী মার্টিনের ডান হাত নাগরাজনকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেশি রাতে তাঁকে ছাড়ার সময় বলে দেওয়া হয়েছে, আগামী কাল, সোমবার ফের আয়কর দফতরে হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু তাঁর পাসপোর্ট আটক করা যায়নি। সেই সুযোগ নিয়ে নাগরাজন বিদেশে পালালে রহস্যের জট খোলা কঠিন হয়ে পড়বে। গ্রেফতার করার ক্ষমতা আয়কর দফতরের হাতে না থাকায় মার্টিনের অন্য দুই ঘনিষ্ঠ অ্যালেক্স ও ডেভিডকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও ছেড়ে দিতে হয়েছে তদন্তকারীদের।
সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-র সহায়তা চায় আয়কর দফতর। কারণ তাদের হাতে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ক্ষমতা রয়েছে। ইডি-ও ইতিমধ্যেই প্রিভেনশন অব মনি লন্ডারিং (পিএমএলএ) আইনে অবৈধ ভাবে টাকা সরানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। প্রয়োজনে নাগরাজন, অ্যালেক্স ও ডেভিডকে কী ভাবে গ্রেফতার করা যায়, সে ব্যাপারে এ দিন ইডি-র তদন্তকারীদের একটি দল আয়কর কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন।
এ দিন কলকাতায় আসেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আয়কর দফতরের বিশেষ তদন্ত শাখার প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর এ দিন সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে লটারি-কাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত জানান তাঁকে। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দু’জনের কথাবার্তা হয়। ৪৫ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ায় অর্থমন্ত্রী আয়কর দফতরকে অভিনন্দন জানান বলে সূত্রের খবর।
গত বৃহস্পতিবার শরৎ বসু রোড, বেহালা ও শিলিগুড়িতে অ্যালেক্স, ডেভিড ও নাগরাজনের ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে বেআইনি টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি কম্পিউটারের বেশ কিছু হার্ডডিস্ক, ল্যাপটপ ও কয়েকটি ডায়েরিও বাজেয়াপ্ত করে আয়কর দফতর।
শুক্রবার রাত থেকে সেই সব হার্ডডিস্ক থেকে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছেন আয়কর দফতরের তদন্তকারীরা। এ কাজে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদেরও। সূত্রের খবর, যে সব ডায়েরি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেগুলিতে মালয়ালম ভাষায় অনেক কিছু লেখা রয়েছে। আয়কর দফতরের কর্তারা দক্ষিণ ভারতীয় অফিসারদের সাহায্য নিয়ে সেই লেখার অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।