এক পঙ্ক্তিতে দাঁড়িয়ে প্রায় একই চেহারার অন্তত ১০ জন যুবক। সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী। হাঁটতে হাঁটতে দাঁড়িয়ে পড়লেন মাঝারি চেহারার এক যুবকের সামনে। মুখে কিছুই বললেন না। কিন্তু তাঁর চোখেমুখের চেহারাই বলে দিল, ‘এই সেই অপরাধী।’
ঘটনাস্থল কৃষ্ণনগর জেল। উপলক্ষ রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ওরফে নজুর শনাক্তকরণ। এবং ওই সন্ন্যাসিনীই ছিলেন রানাঘাটের সেই কনভেন্ট স্কুলের প্রধান। ১৩ মার্চ গভীর রাতের সেই ঘটনার ছ’দিন পরে যিনি এই রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। নজুকে শনাক্ত করতে ফের বাংলায় ফিরলেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার টিআই প্যারেড বা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার শেষে বিমানে ফের দিল্লি চলে গিয়েছেন ওই সন্ন্যাসিনী।
রানাঘাট কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত নজরুল ওরফে নজুকে ১৭ জুন শিয়ালদহ থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, নজু-ই ওই বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করেছিল। ওই ঘটনায় ধৃত অন্য অভিযুক্তেরা জেরার মুখে একই কথা বলেছে বলে সিআইডি-র দাবি। সেই নজুকে শনাক্ত করতেই দিল্লি থেকে আনা হয়েছিল ওই সন্ন্যাসিনীকে।
তিনি কি নজুকে শনাক্ত করেছেন?
সিআইডি সূত্রের খবর, ধর্ষণের সময় সন্ন্যাসিনীর চোখ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে কে তাঁকে ধর্ষণ করেছিল, দেখতে পাননি তিনি। কিন্তু ধর্ষণের আগে তাঁর ধারেপাশে কে ছিল, সেটা তিনি দেখেছিলেন। সেই কারণেই ওই সন্ন্যাসিনীকে দিল্লি থেকে আনা হয়। ঘটনার পরে সন্ন্যাসিনীর জামাকাপড়, ঘটনাস্থলের কিছু জিনিস এবং নজুর দেহরসের নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। নজুর টিআই প্যারেডের রিপোর্ট ওই ডিএনএ রিপোর্টের সঙ্গেও মিলিয়ে দেখে আদালতে পেশ করা হবে।
কী জানালেন ওই সন্ন্যাসিনী?
পুলিশি সূত্রের খবর, সন্ন্যাসিনী জনা দশেক যুবকের মধ্যে নজুকেই চিহ্নিত করেছেন। মুখে কিছু না-বললেও নজুর সামনে দাঁড়ানোর পরে তাঁর চোখমুখ দেখেই উপস্থিত পুলিশ অফিসারেরা যা বোঝার, বুঝে গিয়েছেন। তার পরে অবশ্য নজুকে তিনি শনাক্ত করেছেন বলেই তদন্তকারীদের সূত্রের খবর।
পুলিশ জানাচ্ছে, সে-রাতের বিভীষিকা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ওই সন্ন্যাসিনী। তাই এ রাজ্যে ফেরার পরে সারা ক্ষণই থম মেরে ছিলেন। টিআই প্যারেডের আগে-পরে কার্যত কথাই বলেননি।
রানাঘাট কাণ্ডে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। তারা জানায়, ডিএনএ রিপোর্ট এবং টিআই প্যারেডের রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘সাপ্লিমেন্টারি’ বা পরিপূরক চার্জশিট পেশ করা হবে।