নারদ-কাণ্ড নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় আজ, সোমবার রায় দিতে পারে কলকাতা হাইকোর্ট। এই স্টিং অপারেশনের ভিডিও কোনও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ হবে কি না, সেই বিষয়টিও এ দিনই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে। পরিস্থিতি যখন এমনই, তখন শাসক দলের উদ্বেগ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন, নারদ কাণ্ড আদতে একটি ফৌজদারি বিষয়। এ ক্ষেত্রে তদন্ত করার এক্তিয়ার রয়েছে পুলিশ এবং সিবিআইয়ের। একমাত্র রাজ্য সরকার ও আদালতের অধিকার রয়েছে এমন ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার। এ বিষয়ে তৃণমূল নেত্রী যে অভ্যন্তরীণ দলীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তার যে কোনও মূল্যই নেই, সে কথাটাও এ দিন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন জেটলি।
নারদ-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকার যে তদন্তের নির্দেশ দেবে না, সরকারের হাবেভাবে তা প্রথম দিন থেকেই পরিষ্কার। তৃণমূলের নেতারা এই যুক্তিও দিচ্ছেন যে, ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তাদের সরকার এখন কেবল তদারকির ভূমিকায় রয়েছে। যদিও ভোটের মধ্যে নারদ-কাণ্ডের চাপ সামলাতে শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা বারবারই অবস্থান বদলাচ্ছেন। যেমন, প্রথম থেকেই তাঁরা বলছিলেন, এ সব রাজনৈতিক চক্রান্ত। পরে শনিবার অভ্যন্তরীণ দলীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে ব্যাপারটাও আদ্যন্ত গোলমেলে।
তৃণমূল নেত্রীর ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রবিবার কলকাতায় জেটলি বলেন, ‘‘দলীয় তদন্তে কী যায় আসে? তৃণমূল তাদের দলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিল কি নিল না, তার কোনও গুরুত্বই নেই। ফৌজদারি মামলার তদন্ত ফৌজদারি আইনের আওতায় না হলে তার কোনও অর্থ থাকে না। ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে নেতা-মন্ত্রীদের। এটা পুরোপুরি ফৌজদারি
অপরাধের ঘটনা।’’
নারদ-ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিরোধীদের আক্রমণের মুখে রয়েছে তৃণমূল। সমালোচনার হাত থেকে ছাড় পাচ্ছে না কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারও। বারবার এই প্রশ্নই উঠছে যে, কেন্দ্র কেন তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছে না? কেন স্টিংয়ের ভিডিও রাজ্যসভার নীতি কমিটির কাছে পাঠাতে উদ্যোগী হলেন না সভার নেতা অরুণ জেটলি? কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন সেই প্রশ্নটিই ফের তোলা হয় জেটলির কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারটা রাজ্যের এক্তিয়ারে। কেন্দ্রের নয়।’’
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কেন্দ্র তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি ঠিকই। কিন্তু সিবিআই তদন্তের জন্য জেটলি যে ভাবে সওয়াল করেছেন, তা শাসক দলে চাপ বাড়াতে বাধ্য। সোমবার রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোট। তাই গত শুক্রবারও তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে সওয়াল করেছিলেন, সিবিআইয়ের হাতে যেন তদন্তের ভার না দেওয়া হয়। তাঁর দাবি ছিল, সিবিআই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে চলে। তা ছাড়া গোড়া থেকেই তৃণমূলের তরফে আদালতে আর্জি জানানো হয়েছিল যে, ভোটের মধ্যে যেন মামলাটির শুনানি না হয়। আদালত অবশ্য তৃণমূলের এই আর্জি মানেনি। বরং নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল স্টিংয়ের ভিডিও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে, শুক্রবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর মন্তব্য করেন, ‘‘ব্যাপারটা বিবেচনা করা যেতে পারে।’’ এ বার আদালতের বাইরে রবিবার সেই সম্ভাবনাই আরও উস্কে দিলেন জেটলি। বাড়িয়ে দিলেন তৃণমূলের উদ্বেগ।