বিভিন্ন বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রতারণা নিয়ে জনস্বার্থ মামলাগুলির নিষ্পত্তির কাজে নামল কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ আদালত। বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে নিয়ে গড়া ওই বিশেষ আদালত বুধবার কাজ শুরু করেই জানিয়ে দিল, আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করাই তাদের প্রধান কাজ।
অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলিতে টাকা জমা রেখেও আমানতকারীরা তা ফেরত না-পাওয়ায় যে-সব মামলা হয়েছে, হাইকোর্টের এই বিশেষ আদালতে শুধু সেই সমস্ত মামলারই কাজ হবে। পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৯ অগস্ট, সোমবার। বিচারপতিরা এ দিন জানান, বিশেষ আদালত সপ্তাহে এক দিন বসবে, নাকি একাধিক দিন— তা পরে ঠিক হবে।
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকারবার নিয়ে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে তোলপাড় চলা সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরা প্রায় কোনও সংস্থা থেকেই টাকা ফেরত পাননি। লোভনীয় সুদের টোপ দিয়ে অনেক লগ্নি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে আসছে। কিন্তু তাদের কেউই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা ফেরত দেয়নি। সুদীপ্ত সেনের সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পরে সমগোত্রের অন্যান্য সংস্থার প্রতারণার বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে সারদার প্রতারণা-জাল নিয়ে তদন্তে নামে সিবিআই। অন্যান্য লগ্নি সংস্থার কার্যকলাপও তাদের তদন্তের আওতায় আসবে বলে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে জানায় শীর্ষ আদালত। ২০১৩ সালের এপ্রিলে ধরা পড়েন সুদীপ্ত। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি। টাকা রেখে যাঁরা অগাধ জলে পড়েছেন, প্রাপ্য ফেরত পাননি তাঁরাও।
ক্ষতিগ্রস্ত লগ্নিকারীদের সমস্যার কিছুটা সুরাহা করার জন্য বিচারপতি শ্যামল সেনকে শীর্ষে রেখে একটি কমিশন গড়া হয়েছিল। ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থেকে কিছু আমানতকারীকে পাওনার কিছুটা ফিরিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু বিপুল সংখ্যক লগ্নিকারীর সমস্যা মেটেনি। ইতিমধ্যে এমপিএস-এর মতো কিছু লগ্নি সংস্থা সম্পত্তি বেচে টাকা ফেরত দিতে চাইলেও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গড়িমসি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
এই পরিস্থিতিতে টাকা উদ্ধারে আদালতকেই আঁকড়ে ধরেছেন ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরা। বিভিন্ন লগ্নি সংস্থা টাকা ফেরত না-দেওয়ায় হাইকোর্টে জনস্বার্থের বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেই সব মামলার নিষ্পত্তির জন্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ গত ১৮ অগস্ট বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে নিয়ে বিশেষ আদালত গড়ে দেয়।
এ দিন দুপুরে বিশেষ আদালতের কাজ শুরু হতেই বিচারপতি বসু সংশ্লিষ্ট মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের নির্দেশ দেন, অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির তালিকা এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলার তালিকা তৈরি করে আদালতে জমা দিতে হবে। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও শুভাশিস চক্রবর্তী তখনই অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর কথা তোলেন। তাঁরা জানান, আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিচারপতি শৈলেন্দ্রপ্রসাদ তালুকদারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিল প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু সেই কমিটিতে এখনও পর্যন্ত কোনও নোডাল অফিসার এবং ভ্যালুয়ারই নিয়োগ করা হয়নি।
ওই কমিটিতে নোডাল অফিসার নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকার নাটক করছে বলে কটাক্ষ করেছিলেন হাইকোর্টের সদ্য-প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্র এ দিন আদালতে জানান, নোডাল অফিসারদের নামের তালিকা শীঘ্রই আদালতে জমা দেবেন তিনি। ভ্যালুয়ার নিয়োগের বিষয়েও সব জানানো হবে আদালতকে। বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যে ইতিমধ্যে আলাদা আইন তৈরি করেছে, সে-কথাও জানান এজি।
সব শুনে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করাই এই বিশেষ আদালতের কাজ। তা সে রাজ্যের তৈরি আইনেই হোক কিংবা তালুকদার কমিটির সাহায্যে।’’