সাত্তোর মামলার সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত নন্দী।—ফাইল চিত্র।
সাত্তোরের বধূকে পুলিশি নির্যাতনের মামলায় সিআইডি-র দেওয়া চার্জশিট খুশি করতে পারেনি আদালতকে। চার্জশিটে বিস্তর ফাঁক পেয়ে মঙ্গলবার ঘটনার পুনর্তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার ঠিক দু’দিন পরে, বৃহস্পতিবার সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার (আইও) প্রশান্ত নন্দী তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায়, সিআইডি-র উপরে ‘চাপ’-এর প্রশ্নে সরব হয়েছেন খোদ নির্যাতিতা। এ ব্যাপারে শাসক দলের দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা।
চাপ-প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি প্রশান্তবাবু। এমনকী, দাবি করেন, “তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে কোনও আবেদন করিনি।” যদিও মামলার সরকারি কৌঁসুলি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সহযোগী সরকারি কৌঁসুলি কুন্তল চট্টোপাধ্যায় শনিবার বলেন, “ওই আধিকারিক অব্যাহতি চেয়ে সিউড়ি আদালতে আবেদন জমা দিয়েছেন। সিজেএম ছুটিতে রয়েছেন। সোমবার এ নিয়ে বিশদে কিছু বলা সম্ভব হবে।”
গত ১৭ জানুয়ারি বোমাবাজিতে অভিযুক্ত পাড়ুই থানার সাত্তোরের এক বিজেপি সমর্থককে খুঁজতে বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে তাঁর কাকিমার বাপের বাড়িতে যায় বীরভূম জেলা পুলিশের এক বিশেষ দল। ওই কর্মীকে না পেয়ে তাঁর কাকিমাকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী অকথ্য অত্যাচার চালান বলে অভিযোগ। বুদবুদে হওয়া এফআইআরে এসডিপিও (বোলপুর), সিআই (বোলপুর), ওসি (স্পেশ্যাল অপারেশন্স গ্রুপ) এবং সাত্তোরের কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর নাম ছিল। তুমুল হইচই শুরু হওয়ায় রাজ্য সরকার সিআইডি-কে তদন্তভার দেয়।
মামলায় দু’মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়েও গত ১২ মার্চ আদালতে ধাক্কা খায় সিআইডি। ওই চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে ওসি (এসওজি) কার্তিকমোহন ঘোষ, দুই কনস্টেবল দীপক বাউরি ও কাশীনাথ দাস, ইলামবাজার থানার মহিলা কনস্টেবল আলপনা লোহারের নাম রয়েছে। কিন্তু চার্জশিটের বেশ কিছু ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশান্তবাবুর কৈফিয়ত তলব করেন সিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার তাঁর ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে চার্জশিট গ্রহণ করেনি আদালত। উল্টে প্রশান্তবাবুকে ফের ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই শুনানির পরেই ছুটিতে চলে যান প্রশান্তবাবু। সে কথা উল্লেখ করে বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের মন্তব্য, “পুলিশ-কর্তা এবং শাসকদলের নেতারা যেখানে অভিযুক্ত, তার নিরপেক্ষ তদন্ত কিছুতেই রাজ্যের গোয়েন্দাদের হাতে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারের উপরে চাপ তো বাড়বেই।” নির্যাতিতা বলেন, “আমার উপরে নির্মম অত্যাচারের পরেও মাত্র এক জনকেই অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিতে চেয়েছিল সিআইডি। ওদের পক্ষে কি আদৌ তৃণমূল আর পুলিশের লোকেদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করা সম্ভব?”
সিআইডি-র এক কর্তার দাবি, তাঁদের তরফে আন্তরিক চেষ্টা থাকলেও ওই মামলার চার্জশিট আদালতের পছন্দ হয়নি। নতুন করে তদন্তে নেমে কোনও সূত্র মিললেও, আগে কেন তা পাওয়া গেল না সে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতেই পারে। ওই গোয়েন্দা-কর্তার মন্তব্য, “সব মিলিয়ে চাপ তো ছিলই।” শাসক দলের তরফে তদন্তে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ মানেননি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “ওই সিআইডি অফিসার যদি এমন কোনও আবেদন করে থাকেন, তা হলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তদন্ত-প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানো বা চাপ দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”