বৈশাখীর সঙ্গেই থাকবেন, রত্নার সঙ্গে নয়, স্পষ্ট করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আলিপুর আদালতের রায়কে নিজের ‘পরাজয়’ হিসেবে দেখছেন না কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। যে ভাবে আদালত শুক্রবার তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের ‘একত্রবাস আর্জি’ খারিজ করে দিয়েছে, তাতে এই সম্পর্কের প্রতি তাঁর কোনও ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ আর রইল না বলে শোভন দাবি করছেন। আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে যখন কথা বলেছেন, তখনও রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাননি বলে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে তিনি কিছু জানাতে চাননি। তবে রত্নার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে এখনও যেটুকু ‘আইনগত বাধ্যবাধকতা’ রয়ে গিয়েছে, তা কাটাতে যত দূর যাওয়া প্রয়োজন, তত দূরই যাবেন বলে শোভন মন্তব্য করেছেন। উচ্চতর আদালতের পথেই যে প্রাক্তন মহানাগরিক হাঁটতে চলেছেন, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। সূত্রের খবর, সে বিষয়ে ফোনে আইনজীবীদের সঙ্গে প্রাথমিক পরামর্শও সেরে ফেলেছেন শোভন।
গত আট বছর ধরে আলিপুর আদালতে শোভন-রত্নার বিবাহবিচ্ছেদ মামলা চলছিল। এর মাঝে বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্তও গড়ায়। হাইকোর্ট ফের মামলা ফেরত পাঠায় আলিপুর আদালতেই। শুক্রবার মামলাটির রায় দিতে গিয়ে আদালত শোভনের বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি খারিজ করে দেয়। একই ভাবে শোভনের সঙ্গে একত্রবাসের যে আর্জি রত্না জানিয়েছিলেন, তা-ও আদালত খারিজ করে দিয়েছে। শোভন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘রায়ের কপি (প্রতিলিপি) এখনও হাতে পাইনি। এক বিচিত্র রায়ের কথা শুনেছি। কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমি মামলা করেছিলাম। এমনই পরিস্থিতির কথা আদালতকে জানিয়েছিলাম। যেখানে কোনও বৈবাহিক সম্পর্ক থাকতে পারে না। শুনেছি আমার আর্জি খারিজ হয়েছে। তেমনই শুনেছি একসঙ্গে থাকার যে আর্জি উল্টো দিক থেকে জানানো হয়েছিল, তা-ও খারিজ হয়েছে।’’ শোভন আরও বলেন, ‘‘যে কারণগুলির জন্য ওই আর্জি খারিজ করা হয়েছে, সেই কারণগুলিই তো বিবাহবিচ্ছেদের জন্য যথেষ্ট। তা-ও কেন বিচ্ছেদের আর্জি খারিজ হল, কোন কারণ দেখিয়ে খারিজ করা হল, রায় হাতে পেলে তা খতিয়ে দেখব। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করব।’’
শোভন বলেন, ‘‘আমি শুনেছি আদালতের রায়ে এটা বলা হয়েছে যে, এই বৈবাহিক সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ততা এবং শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এবং মেরামতির পথ নেই। সেই কারণেই একসঙ্গে থাকার আর্জি খারিজ করা হয়েছে। আদালত যদি মেনে নিয়েই থাকে যে, এই সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত এবং মেরামতির অবকাশ নেই, তা হলে বিচ্ছেদেই বা আপত্তি থাকবে কেন, বুঝতে পারছি না।’’ শোভনের কথায়, ‘‘যা পদক্ষেপ করতে হয়, অবশ্যই তা করব। যত দূর যেতে হয়, তত দূরই যাব। কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রাখব না।’’
আলিপুর আদালত যেহেতু তাঁর সঙ্গে রত্নার একত্রবাসের আর্জিও খারিজ করেছে, সেহেতু এই সম্পর্কের প্রতি তাঁর আর কোনও ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ নেই বলে শোভন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘একসঙ্গে থাকার পরিস্থিতি যে নেই, তা তো আদালতই মেনে নিয়েছে। সুতরাং সামাজিক দায়বদ্ধতার আর কোনও প্রশ্নই নেই। আইনগত একটা দায়বদ্ধতা এখনও থেকে গিয়েছে। কিন্তু আসলে যে সেই দায়বদ্ধতাও আমার নেই, তাও আমি প্রমাণ করে দেব।’’
বেহালার পর্ণশ্রীতে শোভনের যে বাড়ি, সেখানেই রত্না এখনও থাকেন। শোভন থাকেন গোলপার্কের একটি বহুতল আবাসনে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই বিন্যাসে যে কোনও পরিবর্তন আসছে না, সে বার্তাও শোভন শুক্রবার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বৈশাখীর সঙ্গে যে সম্পর্কে ছিলাম, সেই সম্পর্কেই থাকব। সেখানে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। বৈশাখীর আর আমার সম্পর্ক হল হৃদয়ের সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গেই রয়েছি, একসঙ্গেই থাকব। এই সম্পর্কের উপরে কোনও আঘাত আমি আসতে দেব না।’’
শোভনের অভিযোগ, এই মামলায় সুবিধা পেতে শোভনকে ‘প্রভাবশালী’ বা ‘ক্ষমতাশালী’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন রত্না। তাঁর কথায়, ‘‘যিনি আমাকে ক্ষমতাশালী বলেছেন, তিনি নিজে বিধায়ক, আমি নই। আমি অনেক দিন আগে থেকেই বিধায়ক, মেয়র বা মন্ত্রী কিছুই নই। রাজনৈতিক ভাবে বরং রত্না ক্ষমতাশালী (বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক)। সেই ক্ষমতার বলে তাঁরা একের পর এক মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করিয়েছেন।’’ শোভন বলেছেন, ‘‘আমি যা বলছি, তার অনেক কিছুই আদালতের রায়েও প্রতিফলিত হয়েছে বলে শুনেছি। যেগুলো প্রতিফলিত হয়নি, তা যাতে আইনের চোখে সিদ্ধ হয়, সে পদক্ষেপও করব। যেখানে যে লড়াই আমাকে করতে হয়, আমি লড়ব। সত্যের জয় হবে বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে।’’