আলোচনাতেই বাধা সরালেন যাদবপুরের সহ-উপাচার্যরা

ঢুকতে বাধা পেয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চেয়ার পেতে বসেছিলেন তাঁরা। পুলিশ ডাকেননি। বিকেলের পরে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ এবং সহ-উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্তকে দফতরে ঢুকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন যাদবপুরের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হাতজোড় করে বলেন, “স্যার, আপনারা ভিতরে যান।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

প্রতিবাদী মিছিলে সামিল প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াও। শুক্রবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

ঢুকতে বাধা পেয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চেয়ার পেতে বসেছিলেন তাঁরা। পুলিশ ডাকেননি।

Advertisement

বিকেলের পরে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ এবং সহ-উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্তকে দফতরে ঢুকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন যাদবপুরের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হাতজোড় করে বলেন, “স্যার, আপনারা ভিতরে যান।”

অসুস্থ বোধ করায় সিদ্ধার্থবাবু অবশ্য তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গিয়েছেন।

Advertisement

এ দিন সকাল ন’টা থেকে অবস্থান শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ১০টা ৩৫ নাগাদ রেজিস্ট্রার এবং ১০টা ৫০ নাগাদ সহ-উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। প্রশাসনিক ভবনের বাইরে চেয়ারে বসে পড়েন ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তা। রেজিস্ট্রার জানিয়ে দেন, “অফিসে ঢোকাটা আমার অধিকার। তাই আমি এসেছি।” দফতরে ঢুকতে পুলিশের সাহায্য চাইবেন কি? প্রদীপবাবু বলেন, “প্রয়োজনে সারা দিন এখানে বসে থাকব। পুলিশ ডাকব না।” সহ-উপাচার্যও জানিয়ে দেন, পুলিশ ডাকার প্রশ্ন নেই।

সিদ্ধার্থবাবু ও প্রদীপবাবুকে বাইরে বসে থাকতে দেখে এ দিন বাইরে বেরিয়ে এসে চেয়ারে বসে পড়েন ডেপুটি রেজিস্ট্রার পার্থপ্রতিম লাহিড়ি, সহকারী রেজিস্ট্রার সঞ্জয়গোপাল সরকার, পরীক্ষা নিয়ামক সাত্যকি ভট্টাচার্য, যুগ্ম রেজিস্ট্রার সুবীর চক্রবর্তী-সহ অন্য আধিকারিকেরা।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে আসেন এক দল শিক্ষক-শিক্ষিকা। শিক্ষিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায় দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ঢোকার দায় তাঁরা অস্বীকার করছেন, সহ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকে সে কথা ঘোষণা করতে হবে বলে পড়ুয়ারা দাবি তোলেন। তাঁরা আরও দাবি করেন, পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে ও অসুস্থ পড়ুয়াদের চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে।

সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল কেন? ছাত্রছাত্রীদের যুক্তি, “আমাদের যখন মারা হয়েছে, তখন ওঁরাও ছিলেন। কিন্তু বাধা দেননি। তাই ওই ঘটনায় সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারও সমান দায়ী।”

কিন্তু এ দিন দফায় দফায় কথা বলে যে পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়েছে তা পড়ুয়াদের কথা থেকে পরিষ্কার। ছাত্র প্রতিনিধিরাই জানান, মামলা প্রত্যাহার এবং চিকিৎসার খরচ বহন করার বিষয়গুলি নিয়ে সহ-উপাচার্য উদ্যোগী হবেন। কিন্তু সে রাতের ঘটনা নিয়ে তিনি নতুন করে আর কিছু বলবেন না।

এই রফার পরে কিছুক্ষণের জন্য দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। দুই পক্ষের পক্ষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়। এক দল জানান, সহ-উপাচার্য যখন দুটি দাবি মেনে নিচ্ছেন, তখন ওঁদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া উচিত। অন্য পক্ষ দাবি করে, সহ-উপাচার্য এমন কিছুই করেননি, যাতে ওঁদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যেতে পারে। কিছুক্ষণ পরে ছাত্রছাত্রীরা হাতজোড় করে রেজিস্ট্রার-সহ অন্যদের বলেন, “স্যার, আপনারা ভিতরে যান।” সহ-উপাচার্য অবশ্য তার খানিক আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গিয়েছিলেন।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে তখন দৃশ্যতই কিছুটা নরম মনোভাব। তাঁরা বলেন, “এটা শুধু যাদবপুর নয়, গোটা ছাত্রসমাজের উপরে লাঠি। আমরা যে বিপুল সমর্থন পাচ্ছি, তা হারিয়ে ফেলার মতো কোনও পদক্ষেপ আমরা করব না।” বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁরা বলেন, “উপাচার্য যদি সে দিন আলোচনায় রাজি হতেন, তা হলে জল এত দূর গড়াত না।” তবে তাঁদের আন্দোলন যে জারি থাকবে, তা এ দিন ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। এক ছাত্রীর কথায়, “উপাচার্য যদি মনে করেন পুজোর ছুটিকে আন্দোলন থিতিয়ে যাওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন, তা হলে ভুল করবেন।”

নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যেই খবর আসে দর্শনের বিভাগীয় প্রধান সৌমিত্র বসু পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষক ও ছাত্রদের একটা বড় অংশের দাবি, মঙ্গলবারের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের (ইসি) সভায় সদস্য হিসেবে সৌমিত্রবাবুও উপস্থিত ছিলেন। অথচ সে দিন রাতের এমন একটা ঘটনা তিনি ঠেকাতে পারেননি। সেই দায় বহন করেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। সৌমিত্রবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “পদত্যাগ করেছি কি না তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার এক্তিয়ার আমার নেই। কিছু বলার থাকলে কতৃর্পক্ষ বলবেন।”

আজ, শনিবার দুপুর দুটোয় মঙ্গলবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা শহরে মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন। নন্দন-এর সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিল শেষ হবে রাজভবনে। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন