‘কুমারী মেয়ে ‘সিল্ড বটল’ বা ‘সিল্ড প্যাকেট’-এর মতো!’, বিতর্কিত পোস্ট শিক্ষকের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তিনি। এ-হেন এক অধ্যাপকই ফেসবুকে মেয়েদের কুমারীত্বের তুলনা করলেন ‘সিল্ড’ বোতল বা বিস্কুটের ‘সিল্ড প্যাকেট’-এর সঙ্গে! যা নিয়ে রবিবার দুপুর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্কে সরগরম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০০
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কনক সরকার এবং তাঁর বিতর্কিত পোস্ট।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তিনি। এ-হেন এক অধ্যাপকই ফেসবুকে মেয়েদের কুমারীত্বের তুলনা করলেন ‘সিল্ড’ বোতল বা বিস্কুটের ‘সিল্ড প্যাকেট’-এর সঙ্গে! যা নিয়ে রবিবার দুপুর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্কে সরগরম। প্রতিবাদ শুরু হয় নানা মহল থেকে। তার পরে সেই বিতর্কিত ‘পোস্ট’ ফেসবুক থেকে মুছেও দিয়েছেন ওই অধ্যাপক।

Advertisement

কনক সরকার নামে ওই অধ্যাপক এ দিন দুপুরে ফেসবুকে ‘ভার্জিন ব্রাইড-হোয়াই নট?’ (ভ্যালু ওরিয়েন্টেড সোশ্যাল কাউন্সেলিং ফর এডুকেটেড ইউথ)— এই শিরোনাম দিয়ে লেখেন, কুমারী মেয়ে হচ্ছে ‘সিল্ড বটল’ কিংবা ‘সিল্ড প্যাকেট’-এর মতো। অনেক ছেলে এখনও বোকা, যারা কুমারী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করার কথা ভাবে না। এখানেই থেমে থাকেননি ওই অধ্যাপক। লিখেছিলেন, একটি মেয়ে কুমারীত্ব নিয়ে জন্মায় এবং সেই কুমারী স্ত্রী দেবদূতের মতো।

ওই অধ্যাপকের ‘পোস্ট’ সরব হয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও। তাঁর সবিস্ময় প্রশ্ন, ‘‘এক জন অধ্যাপক কী ভাবে এমন কথা বলতে পারেন? তাঁর কাছ থেকে পড়ুয়ারা কী শিক্ষা পাচ্ছে! উনি নিজের পরিবারের মহিলাদেরও কি এ ভাবেই দেখেন?’’ কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন কনকবাবুর রুচি নিয়েও। কনকবাবুর ফেসবুক পোস্টের তলাতেই শুরু হয়ে যায় প্রতিবাদের ঝড়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পড়ুয়া এবং কলা বিভাগের বিদায়ী ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন সোমাশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের কাছে যাবো। ওঁর এই ধরনের মন্তব্য বরদাস্ত করবো না।’’

Advertisement

যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সহ-সভানেত্রী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত ভাবে মতামত প্রকাশ করতে অস্বস্তি হয়। উনি বোধ হয় মেয়েদের অন্ধকার যুগে টেনে নিয়ে যেতে চান! তবে জুটা-র পক্ষ থেকে আমরা এ বিষয়ে কথা বলব। কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ করতেই হবে।’’ সহ-উপাচার্য প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ নিতে হবে। অভিযোগ এলে দেখব।’’

আরও পড়ুন: পরিবেশ বাঁচাতে ভরসা পুরনো শাড়ি, বার্তা তিরুঅনন্তপুরমের জেলাশাসকের

সমাজকর্মী এবং শিক্ষিকা শাশ্বতী ঘোষ বলছেন, ‘‘সিল্ড বটলের সঙ্গে তুলনা করলে তো উনি বোঝাতে চাইছেন, একটি করে ‘সিল্ড’ বোতল খুলে সেটাকে ব্যবহার করে আবার ফেলে দেওয়া। উনি কি সে-দিকেই সম্পর্কগুলিকে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করছেন? তা হলে তো মানবিক সম্পর্কের কোনও জায়গা নেই।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘শারীরবিদ্যা সম্পর্কে ওঁর পড়াশোনা করার দরকার আছে। কারণ কোনও মেয়ের সতীচ্ছদ শুধু যৌন সম্পর্কের জন্য ছিন্ন হয় না। আরও অনেক কারণে তা ছিন্ন হতে পারে। ওঁর পড়াশোনা করা দরকার।’’

সমালোচনাকে আমল দিতে নারাজ অধ্যাপক। ‘‘আমাদের সকলের নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। আমিও সেটাই করেছি। অন্যেরা তা গ্রহণ করবেন কি না, সেটা তাঁদের ব্যাপার,’’ বলেন কনকবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন