‘জেল ভরো’য় ভরল পথ, যুদ্ধ পুলিশ-বামে

ফসলের ন্যায্য দাম, কৃষিঋণ মকুব, ন্যূনতম মজুরির মতো কিছু দাবিতে বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে ‘জেল ভরো’ কর্মসূচি নিয়েছিল সিপিএমের কৃষক সভা ও সিটু। দাবির প্রায় সবই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪১
Share:

আন্দোলন: পুলিশকে বোকা বানিয়ে রাজভবনের গেটে লাল ঝান্ডা। গ্রেফতার ১৯। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যে শাসক তৃণমূলের বিপরীতে বিরোধী পরিসরে দ্রুত উঠে আসছে বিজেপি। তৃণমূল এবং বিজেপির মেরুকরণের আবহ মোকাবিলা করে লড়াই চালানোই তাঁদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মেনে নিচ্ছেন সিপিএম নেতারা। এই রকম পরিস্থিতিতে ‘জেল ভরো’ কর্মসূচি ঘিরে রাজ্য জুড়ে অস্তিত্ব জানান দিল সিপিএম। প্রায় প্রতি জেলাতেই আইন অমান্য আন্দোলনে ভিড় হল বিপুল। তার মধ্যে বেশ কিছু জেলায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাধল। পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস চলল বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে।

Advertisement

ফসলের ন্যায্য দাম, কৃষিঋণ মকুব, ন্যূনতম মজুরির মতো কিছু দাবিতে বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে ‘জেল ভরো’ কর্মসূচি নিয়েছিল সিপিএমের কৃষক সভা ও সিটু। দাবির প্রায় সবই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। সেই কর্মসূচিতে এ দিন বারাসত, ডায়মন্ডহারবার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, আসানসোল, চুঁচু়ড়া, মেদিনীপুর, তমলুক, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ-সহ নানা জেলা শহরেই চোখে পড়ার মতো জমায়েত হয়েছিল। অনেক জায়গাতেই পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়েছে মিছিল, পুলিশও পাল্টা লাঠি চালিয়েছে। কলকাতায় আচমকা বিক্ষোভ দেখিয়ে রাজভবনের ফটকে লাল ঝান্ডা আটকে দিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন ১৯ জন ছাত্র-যুব কর্মী। তাঁদের গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হলেও রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আইন অমান্যকারীদের দাবি মেনে ১৯ জনকে প্রিজন ভ্যানে চাপিয়ে ওই বিক্ষোভস্থলে এনে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে অন্তত ৩৫ জন জখম হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৯ জন পুলিশকর্মী। জখম হয়েছেন তিন সাংবাদিকও৷ আন্দোলনকারীদের হটাতে পুলিশ শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালায় বলেও অভিযোগ৷ যদিও পুলিশ-কর্তারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বালুরঘাটেও ঘণ্টাদেড়েক ধরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় প্রশাসনিক ভবন চত্বর। পুলিশের লাঠির আঘাতে সিপিএমের অন্তত ১৬ জন আহত হন। পাল্টা হামলায় জখম হন দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। মালদহে সংঘর্ষে আহত হন দুই পুলিশকর্মী এবং ১০ বাম সমর্থক। উত্তরবঙ্গে এবং চা-বলয়ে পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের সরিয়ে বিরোধী হিসেবে ভাল ফল করেছে বিজেপি। সেখানে এ দিনের জমায়েত সিপিএম নেতাদের স্বস্তি দিয়েছে। শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বোঝা গেল, রাস্তায় আমরাই প্রধান বিরোধী শক্তি।’’

Advertisement

ডায়মন্ডহারবারে বুধবার রাত থেকেই ঘরে ঘরে হুমকি দেওয়া, সিপিএমের পতাকা-ফেস্টুন খুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আইন অমান্যে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এ দিন ফলতার দোস্তপুর, সরিষাহাটের একাধিক মোড়ে শাসক দলের দুষ্কৃতী বাহিনী বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর গাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য তাদের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি শক্তি মণ্ডলেরও দাবি, তাঁদের নামে ‘মিথ্যা প্রচার’ হচ্ছে।

কলকাতার কর্মসূচিতে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘শুধু এক দিনের কর্মসূচিই নয়। ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে থাকতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন