রাজ্যের উন্নতির স্বার্থে মমতাকে সাহায্যের আশ্বাস অরুণ জেটলির

নির্বাচনের সময় প্রবল বিরোধিতা ছিল। কিন্তু ভোটে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে সাংবিধানিক দায়িত্ব মেনে তাঁর সরকারকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর যুক্তি, সাংবিধানিক কাঠামো মেনে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক থাকে। আর রাজনীতির শর্ত মেনে দলের সঙ্গে দলের লড়াই হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

পাশাপাশি। শপথ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অরুণ জেটলি এবং কানিমোঝি। — নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচনের সময় প্রবল বিরোধিতা ছিল। কিন্তু ভোটে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে সাংবিধানিক দায়িত্ব মেনে তাঁর সরকারকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর যুক্তি, সাংবিধানিক কাঠামো মেনে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক থাকে। আর রাজনীতির শর্ত মেনে দলের সঙ্গে দলের লড়াই হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

Advertisement

কলকাতার রেড রোডে শুক্রবার মমতার মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন জেটলি, অসামরিক বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু এবং কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। অনুষ্ঠান সেরেই বাবুল অবশ্য গিয়েছিলেন তৃণমূলের হামলায় জখম এক আরএসএস কর্মীকে দেখতে। আর শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করে জেলাগুলিতে এসপি দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে রাজ্য বিজেপি।

নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব বারবার বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রাজনীতির লড়াই মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়। সেই যুক্তি মেনেই এ দিন শপথ অনুষ্ঠানের পরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে গিয়ে জেটলি ব্যাখ্যা করেন, ‘‘দলের সঙ্গে দলের রাজনৈতিক লড়াই থাকবে। কিন্তু আমি অনুষ্ঠানে এসেছি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক সৌজন্যের সম্পর্ক রক্ষা করতে।’’ এই অবস্থান থেকেই ভোটে জয়ের জন্য সাংবাদিক সম্মেলনেও মমতার প্রতি অভিনন্দন জানান জেটলি। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এক সময় দারুণ শিল্পায়ন হয়েছে। কিন্তু বাম জমানার ৩৪ বছরে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি মমতা-সহ যে কোনও সরকারের কাছেই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। রাজ্যের উন্নতির স্বার্থে কেন্দ্র সব রকম সাহায্য করছে, করবে।’’

Advertisement

শুধু মুখের কথাই নয়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চের পিছনে তাঁবুতে মধ্যাহ্ন ভোজের আসরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে জেটলির। বাবুলও সেখানে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আবার কথা হয়েছে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে রাজ্যকে সাহায্য করার আশ্বাসই দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে এ দিন জেটলিকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলেন মুকুল রায়। বিমানবন্দর থেকে মধ্য কলকাতার যে হোটেলে যান জেটলি, সেখানেও মুকুল ছিলেন। সেখান থেকে একই গাড়িতে জেটলি, মুকুল এবং বাবুল শপথ অনুষ্ঠানে যান।

জেটলির ব্যাখ্যা, জাতীয় সড়ক মেরামতে সাহায্য থেকে শুরু করে রাজস্ব ঘাটতিযুক্ত রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করা— এ সবই কেন্দ্রীয় সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তবে তার জন্য রাজ্যে যে বিজেপি-তৃণমূলের রাজনৈতিক লড়াই থেমে থাকবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন জেটলি। তাঁর বক্তব্য, এক সময় বিজেপি-কে উত্তর ভারতের দল বলে মনে করা হত। কিন্তু সেই বিজেপি-ই ধীরে ধীরে নানা রাজ্যে প্রধান দল হয়ে উঠেছে। অসম পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। সেখানে সরকার গড়ার পরে দলের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গে প্রথমত প্রধান বিরোধী দল হওয়া।

সেই লক্ষ্যেই আবার প্রতিদিন সুর চড়াচ্ছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলের সন্ত্রাসে প্রতিবাদে মেদিনীপুরের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ দিন দিলীপবাবুর হুমকি, ‘‘আমি যদি চাই, কালকের মধ্যেই পাঁচ হাজার যুবক খড়্গপুরে জমা হয়ে যাবে। খড়্গপুরে ৩৪ হাজার ভোট পেয়েছে তৃণমূল। সেই ৩৪ হাজার লোককে যদি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পেটাই, তা হলে কে আমাকে আটকাবে? আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে প্রয়োজনে পেশি শক্তি দেখাব!’’ দিলীপবাবুর আরও হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূলকে বলছি, তিনটি আসন জিতেছি। এটাই যথেষ্ট তোমাদের হিসাব বরাবর করার জন্য। আশা করছি, তোমরা শুধরে যাবে। না হলে আমরাই তোমাদের শুধরে দেব। কোন কুকুরকে কোন মুগুর দিয়ে ঠিক করতে হয়, সেটা জানা আছে!’’

রাজনৈতিক লক্ষ্যের কথা বললেও জেটলি কিন্তু এ দিন মমতার দলকে আক্রমণের পথে হাঁটেননি। এ রাজ্যে বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্যসভায় বিল পাশের তাগিদ আর অন্য দিকে বাংলায় সংগঠন মজবুত করার দায় থেকে দু’মুখো নীতি নিয়ে চলছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এ দিনই বলেছেন, ‘‘জনমতকে সম্মান করতে দুই মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকারের শপথে গিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কিছু দায়িত্ব থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষের পথ ছেড়ে দিয়েছে!’’

সহ প্রতিবেদন: দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন