ফের টিএমসিপির সভাপতি পদে বহাল হতে পারেন জয়া দত্ত? ফাইল চিত্র।
দিন তিনেক আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শীর্ষ পদ থেকে সরানো হয়েছিল তাঁকে। ‘ভুল শুধরে’ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাঁকেই আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সভানেত্রী করা হতে পারে। খবর পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূল সূত্রেই।
কলেজে কলেজে তোলাবাজি তথা ভর্তি দুর্নীতির ধাক্কাতেই পদ গিয়েছিল জয়া দত্তর। তোলাবাজির সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষেদের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেছিলেন জয়া। দায় চাপিয়েছিলেন বহিরাগতদের উপরে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও সেই ‘বহিরাগত’ তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরক্ত ছিলেন গোটা পরিস্থিতি নিয়ে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভানেত্রী সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেছিলেন। তৃণমূল ভবনে ছাত্র সংগঠনের বৈঠক ডাকা, বৈঠক শেষে সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া, নিজের সিদ্ধান্তে চারটি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিট ভেঙে দেওয়া— এ সবও জয়ার বিপক্ষে গিয়েছিল বলেই খবর। সব মিলিয়ে জয়াকে সংগঠনের সভানেত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গত কয়েক দিনে জয়া নিজের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন দলের কয়েক জন সিনিয়র নেতার কাছে। সে সব কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছেছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব বদলের বিষয়টি তৃণমূল নেত্রী পুনর্বিবেচনা করতে পারেন বলেও একাংশ মনে করছে।
বুধবার সন্ধ্যায় জানা গিয়েছিল টিএমসিপি-র সভানেত্রীর পদে জয়া দত্ত আর নেই। দশ দিনের মধ্যে নতুন সভাপতির নাম চূড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর পর থেকেই একের পর এক নাম ভেসে উঠতে থাকে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সম্ভাব্য নতুন সভাপতি হিসেবে। দক্ষিণ কলকাতার সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়, নদিয়া থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা লগ্নজিতা চক্রবর্তী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের সভানেত্রী রুমানা আখতার, বিই কলেজের প্রাক্তনী তথা ইঞ্জিনিয়ার কৌস্তভ দে, বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণাঙ্কুর, উত্তর ২৪ পরগনার ছাত্র নেতা মণিশঙ্কর মণ্ডল— এমন অনেক নামই শোনা গিয়েছে গত কয়েক দিনে। বর্তমানে তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সংস্রবহীন যিনি, তৃণমূল ছাত্র পরিষেদের সেই প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাও পুরনো পদে ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছিল। তবে শুক্রবার রাত থেকে ফের জয়া দত্তর নামটা আলোচনায় ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: ফেরাতেই হবে প্রবেশিকা, যাদবপুরে অনশন শুরু পড়ুয়াদের
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই জয়া দত্তকে পছন্দ করেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। কিন্তু খোদ দলনেত্রী বিরক্ত হওয়ায় জয়ার পদ আর বাঁচানো যায়নি। গত কয়েক দিন ধরে জয়া দলের কয়েক জন সিনিয়র নেতার কাছে লাগাতার দরবার করেছেন, নিজের বক্তব্য জানানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে কিছু কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও পৌঁছয় বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তবে জয়া পুনর্বহাল করার বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবেচনা করছেন কি না, তা জানা যায়নি।
২১ জুলাই সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বাইপাস সংলগ্ন মিলনমেলায় যান। মিলনমেলা থেকে তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলের ছাত্র ও যুব শাখার সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল অভিষেকের। সেই বৈঠকে জয়া দত্তও আমন্ত্রিত বলে শোনা যাচ্ছিল। তবে তৃণমূল ভবনে নয়, তার আগেই জয়াকে দেখা গিয়েছে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে। জয়াকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন মিলনমেলায় ঢোকেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে দূরের জেলাগুলি থেকে যে কর্মী-সমর্থকরা আসবেন, তাঁদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত কী ভাবে হচ্ছে, অভিষেক তা নিজেই খতিয়ে দেখেন।
আরও পড়ুন: নথি যাচাই না-হলে কি আরও দুর্নীতি