লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে বিপর্যয়ের পরে এক দিকে রাজ্যে দলকে আন্দোলনের পথে রাখতে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তারই পাশাপাশি আবার যৌথ আন্দোলনের প্রস্তাব নিয়ে দলের অন্দরে জলঘোলাও অব্যাহত!
মুর্শিদাবাদ-মালদহের বাইরে লোকসভায় খারাপ ফল এবং দলে ভাঙনের ধাক্কা কাটিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে আজ, শনিবার কলকাতার রাজপথে মিছিল করতে চলেছে কংগ্রেস। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগার প্রতীক হিসাবে কামান নিয়ে আজ পথে নামবেন অধীর চৌধুরী, সোমেন মিত্র, মনোজ চক্রবর্তী, অপূর্ব সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। যদিও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় মিছিলের সময় মার্কিন তথ্যকেন্দ্র থাকবে বন্ধ। মিছিলের উপলক্ষ গাজায় ইজরায়েলি হানা ও তাতে আমেরিকার মদতের প্রতিবাদ হলেও আসলে পথে নামাই এমন কর্মসূচির নেপথ্য কারণ। তার আগে শুক্রবারই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হয়ে কংগ্রেস পরিষদীয় দল এবং ছাত্র পরিষদ আলাদা ভাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য (এনসেফ্যালাইটিস মোকাবিলায় ব্যর্থতা) ও শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছে। কংগ্রেস যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েনি, তা প্রমাণ করতেই এখন নেতৃত্ব মরিয়া।
কিন্তু এর মধ্যেই দলের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে রয়েছে একশো দিনের কাজের নিয়ম ও পরিধি সঙ্কুচিত করার প্রতিবাদে যৌথ আন্দোলন চেয়ে বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়ার আহ্বান! কলকাতায় এ দিনের মিছিলে মানসবাবু অবশ্য থাকছেন না। ‘শহিদ দিবস’-এর পূর্বঘোষিত কর্মসূচির জন্য তিনি মেদিনীপুরে থাকবেন বলে অধীরকে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল যখন একশো দিনের কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, সেই সময়ে তাদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনের প্রস্তাবে ক্ষোভ গোপন করেননি প্রদেশ সভাপতি অধীর।
প্রায় সেই সুরেই কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপনেতা তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “একশো দিনের কাজ কংগ্রেসেরই প্রকল্প। কিন্তু এক সঙ্গে চলতে যাব, তার পরে পিছন থেকে ল্যাং মেরে দেবে এই অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছে!” কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবেরও বক্তব্য, দলে এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে শুনে মানসবাবুও বিস্মিত এবং মর্মাহত। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, “কে এল, কে এল না, তা নিয়ে আমি তো ভাবতে বলিনি! দল আন্দোলন করবে কি না, তা-ও দলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” তৃণমূলের প্রতি তিনি যে বিশেষ কোনও বার্তা দিতে চাননি, ফের সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন মানসবাবু। জট কাটাতে শেষ পর্যন্ত প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মানসবাবু। কংগ্রেসের একাংশই অবশ্য বলছেন, একশো দিনের কাজ নিয়ে আন্দোলনের প্রশ্নে অহেতুক জলঘোলা হচ্ছে। ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী কেন ঈদের শুভেচ্ছা জানাননি, তা-ই নিয়ে সংসদে তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সুরে বক্তৃতা করেছেন স্বয়ং প্রদেশ সভাপতি অধীর। তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে!