৮৮ বছর বয়সে আবার বিয়ে! মতলবটা কী?

চিত্রনাট্যের আদালত-দৃশ্য নয়। কলকাতা হাইকোর্টের জলজ্যান্ত মামলায় তখন উপচে পড়ছে কৌতুক ও কৌতূহল। আর বাস্তব মামলা বলেই ঝটিতি আইনের স্বর শোনা গেল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর গলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪০
Share:

ছেলেমেয়েদের হাত থেকে বাঁচতে বিয়ে করতে চান বৃদ্ধ। কিন্তু বিয়েতেও বাধা যে সেই ছেলেমেয়েরাই! আর পুলিশও ওই ছেলেমেয়েদের দিকে। তারা পরামর্শ দিচ্ছে, ৮৮ বছর বয়সে আবার বিয়ের ভুল যেন কোনও মতেই না-করেন। ধর্মাবতার, আমার মক্কেলকে বাঁচান!!

Advertisement

‘‘পুলিশ মোটেই কোনও ভুল কাজ করেনি। আপনার মক্কেলকে জানিয়ে দিন, আমিও তাঁকে সেই পরামর্শই দিচ্ছি,’’ বৃদ্ধের আইনজীবীকে সটান বলে দিলেন বিচারপতি।

চিত্রনাট্যের আদালত-দৃশ্য নয়। কলকাতা হাইকোর্টের জলজ্যান্ত মামলায় তখন উপচে পড়ছে কৌতুক ও কৌতূহল। আর বাস্তব মামলা বলেই ঝটিতি আইনের স্বর শোনা গেল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর গলায়। তিনি জানিয়ে দিলেন, ছেলেমেয়েদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য অশীতিপর বৃদ্ধ ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানালেও আদালত তাতে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করছে না।

Advertisement

আইনজীবী শিবিরের একাংশের বক্তব্য, বিয়েপাগলা বুড়োর কীর্তি এটা নয়। সন্তানদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এই বয়সে বিয়েকে হাতিয়ার করতে চাইছেন জিরাটের ওই বৃদ্ধ। হুগলির বলাগড় থানার পুলিশ জানায়, জিরাটের অনিলকুমার পালের স্ত্রী বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর নিজের বাড়ি আছে। রয়েছে কিছু জমিজমাও। পুলিশের কাছে বৃদ্ধের অভিযোগ, তাঁর ছয় ছেলেমেয়ে চাইছেন, তিনি তাঁর সম্পত্তি তাঁদের নামে লিখে দিন। বৃদ্ধ তাতে রাজি নন। সেই জন্য ছেলেমেয়েরা জোট বেঁধে তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। তাঁর উপরে তাঁরা মানসিক অত্যাচারও চালাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের হাত থেকে বাঁচতেই তিনি আবার বিয়ে করতে চান। কিন্তু তাতে আরও চটেছেন ছেলেমেয়েরা। বৃদ্ধের আর্জি, ছেলেমেয়েদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। ফের বিয়ে করতে পুলিশ তাঁকে সাহায্য করুক।

আরও পড়ুন:‘রেহাই দিন পরিবারকে’

কিন্তু সাহায্য করা দূরে থাক, পুলিশ তাঁকে বিয়ে করতে নিষেধ করছে বলে অভিযোগ জানিয়ে হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা দায়ের করেছেন অনিলবাবু। সোমবার ছিল সেই মামলার শুনানি।

বৃদ্ধের আইনজীবী বিশ্বজিৎ সরকার আদালতে জানান, বিয়ে করতে চেয়ে মাস চারেক আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তাঁর মক্কেল। তাঁর পছন্দের পাত্রী ষাটোর্ধ্ব কোনও বিবাহবিচ্ছিন্না বা বিধবা। বিজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, তিনি পেশায় আইনজীবী। মাস গেলে বাড়ির ভাড়া বাবদ ১৮-২০ হাজার টাকা রোজগার রয়েছে তাঁর। বিজ্ঞাপন দেখে দু’-এক জন তাঁর মক্কেলের সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগও করেছেন।

সব শুনে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘তা বলে বিয়ে! এই বয়সে?’’

বিশ্বজিৎবাবু জানান, সম্পত্তি হাতানোর জন্য তাঁর মক্কেলের ছেলেমেয়েরা যে উঠেপড়ে লেগেছেন।

‘‘মতলবটা কী? বিয়ে করে ফেললে ছেলেমেয়েরা আর সম্পত্তি পাবে না? তাঁরা যে এখনও বাবাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠাননি, এই যথেষ্ট,’’ মন্তব্য করেন বিচারপতি।

বৃদ্ধের আইনজীবী জানান, বলাগড় থানায় ছেলেমেয়েদের অত্যাচারের কথা জানিয়ে তাঁর মক্কেল অভিযোগ জানান। পুলিশ সেই অভিযোগ পেয়ে কিছুই করছে না। উল্টে বিয়ে করতে নিষেধ করছে। তিনি যাতে আর বিয়ে না-করেন, সেই পরামর্শ দিচ্ছে।

তিনিও একই পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েও বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের কিছু করার নেই বলেই আদালত কোনও নির্দেশ
দিচ্ছে না।’’

এখানেই মামলার নটে গাছটি মুড়িয়ে দেন বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন