পাকড়াও: জলপাইগুড়ি কোর্টে জুহি চৌধুরী। ছবি: সন্দীপ পাল
বেপাত্তা নেত্রীর খোঁজে কখনও তাঁরা নিয়েছেন ভিখারির ছদ্মবেশ। কখনও গেরুয়া পরে দোতারা হাতে গান গেয়ে পথে পথে ঘুরেছেন। এই ভাবেই শেষ পর্যন্ত সাফল্য এল সিআইডি-র। মঙ্গলবার রাতে নেপাল সীমান্তের খড়িবাড়ি এলাকা থেকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করলেন শিশু পাচার কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত জুহি চৌধুরীকে। বুধবার তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হয়। বিচারক জুহিকে ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কী ভাবে ধরা পড়লেন জুহি? গোয়েন্দারা যে গল্প শুনিয়েছেন, তা অনেক রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনিকে হার মানায়। অনেকেই যে কাহিনির সঙ্গে তুলনা টেনেছেন ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এর। সেখানে নকল মছলিবাবা সেজে মগনলালকে পাকড়াও করেছিল ফেলুদা। এখানেও তেমনই সাধু সেজে ঘুরতে হয়েছে গোয়েন্দাদের।
সিআইডি সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে তাঁরা প্রথমেই জুহির খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর হদিশ পান। জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দা সেই যুবক ও তাঁর আত্মীয়দের উপরে নজর রাখা দিয়ে শুরু হয় জুহির খোঁজ। এই সময়েই গোয়েন্দারা জানতে পারেন, নেপাল লাগোয়া বাতাসি এলাকায় ওই বন্ধুর মামির বাড়িতে রয়েছেন জুহি।
আরও পড়ুন:চিঠি, প্যাডে মমতার ছবি দিলেই জেল
গোয়েন্দারা যখন অনেকটা নিশ্চিত হন যে, জুহি সীমান্তের কোনও গ্রামে আছেন, তখন তাঁরা ছদ্মবেশ ধরেন। কখনও ভিখারি, কখনও সাধু— এই ভাবে ঘুরে ঘুরে তাঁরা পৌঁছে যান জুহির গোপন ঘাঁটির কাছে। এর মধ্যে এক দিন গোয়েন্দারা অস্ত্রশস্ত্র সীমান্তের এ পারে রেখে কাঁকরভিটা থেকে নেপাল নম্বর প্লেটের চারটি গাড়ি ভাড়া করে বিরতামোড়েও ঘুরে আসেন।
শেষে, কলকাতা থেকে নির্দেশের পরে মঙ্গলবার রাতেই অভিযান হয়। জুহিরই এক পরিচিতকে ধরে গোয়েন্দারা পৌঁছে যান গন্তব্যে। তাঁদের টোকা শুনে দরজা খুলে যেতেই দেখা মেলে বিজেপির তরুণ নেত্রীর। ক্লান্ত মুখে চিন্তার ছাপ। পালানোর চেষ্টা তো করেনইনি। বরং দ্রুত পোশাক বদলে বেরিয়ে আসেন গোয়েন্দাদের সঙ্গে। পরে জুহি বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ারই ছিল। গত কয়েক দিন ধরে টের পাচ্ছিলাম। আসলে আমাকে ফাঁসানো হল।’’
আর গোয়েন্দারা বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস বেশি দেরি হয়নি। নইলে জুহি হয়তো নেপালের অন্য কোথাও গা ঢাকা দিতেন!’’