বৈঠক-শেষ: কালীঘাটের বাড়ি থেকে নবান্নের পথে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: প্রদীপ আদক
আর বকাঝকা বা সতর্ক করা নয়। লেটার হেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছেপে প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে এ বার সোজা এফআইআর দায়ের করবে দল। যেতে হবে শ্রীঘরে। ছাড় নেই কারওরই। তা তিনি তৃণমূলের যত বড় নেতাই হোন না কেন!
বুধবার কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন নেত্রী। সেখানেই পষ্টাপষ্টি দলের নেতাদের এ কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বলে দেন, ‘‘একটা কথা সবাই সাফ বুঝে নিন। লোভীদের এ দলে আর স্থান হবে না।’’ সূত্রের খবর, দলের সর্বস্তরের নেতাদের বিবিধ বিষয়ে সমঝে দেওয়ার মেজাজেই এ দিন ছিলেন মমতা। বাঁকুড়ার জেলা সভাপতি অরূপ খাঁকে যেমন বলে দেন, ‘‘এখনও সব ব্লক কমিটি তৈরি করতে পারেননি। আপনি কেন জেলার সভাপতি থাকবেন?’’
বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে দাঁড় করিয়ে বলেন, ‘‘অন্যের পার্টি অফিস দখল আর বালি চুরি ছাড়া তো কিছুই করছ না!’’ এ সব সাত-পাঁচ কথার পরে এক সময়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলে একটা প্রবণতা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। লেটার হেডে নেত্রীর ছবি ছাপিয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে প্রশাসনের কাছে। আগেও সতর্ক করা হয়েছে। এগুলো কিন্তু বরদাস্ত করা হবে না।’’
পার্থবাবু কথা শেষ করার আগেই তাঁর হাত থেকে মাইক নিজের হাতে নিয়ে নেন মমতা। তার পর বলেন, ‘‘সতর্ক আবার কীসের? এ সব বেচাল দেখলে সোজা এফআইআর করবেন। পুলিশ অ্যারেস্ট করবে। তার পর কথা!’’ এই প্রসঙ্গেই ‘লোভীদের’ সতর্ক করেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন: সাধু বেশে জুহি লাভ সিআইডি-র
দলে নেত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, কলকাতায় এবং জেলায় তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সামনে রেখে অবাধ অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কাজও করছেন তাঁরা। কোনও কোনও নেতার আবার বিলাসের শেষ নেই। তা ছাড়া, শাসক দলে নবাগত কিছু নেতার গতিবিধি দেখে মানুষের মনে এই ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, তৃণমূলে গেলেই বুঝি রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায়, গাড়ি-বাড়ি কেনা যায়। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার কোর কমিটির বৈঠকে দলের এক সাংসদও এই ‘রোগের’ কথা তুলে ধরেছিলেন। মমতা-ঘনিষ্ঠ ওই মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিদি-র কাছে সব খবরই রয়েছে। এ বার বেনোজল দূর করা শুরু করেছেন তিনি।’’
দলের নেতা-কর্মী বা বাইরের কোনও লোককে তাঁর সঙ্গে ‘নিজস্বী’ তুলতে এখন আর অনুমতি দেন না মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, দলে তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে অনেকে সেই ছবি দেখিয়ে পুলিশ-প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এ দিকে কে কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে, তার ঠিক নেই। তবে তাঁর দলেরই এক নেতার কথায়, ‘‘দুষ্টের ছলের অভাব হয় না। জেলায় জেলায় তস্য ছোট নেতাও এখন লেটার হেডে দিদির ছবি ছাপাচ্ছে।’’
যদিও শৃঙ্খলা কায়েমের উদ্দেশ্যে তৃণমূল নেত্রীর এই পদক্ষেপের কথা শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘লোভী বাছতে গাঁ উজাড় না হয়ে যায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy